উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের এক সরকারি হাসপাতালে এক মুসলিম ব্যক্তির নামাজ পড়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। মাত্র ২০ মিনিটের ওই নামাজ ঘিরে কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি সমালোচনা শুরু করেছে, অভিযোগ তুলেছে ধর্মীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিষয়ে।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি বিধায়ক কেতকী সিংহ একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে মুসলিমদের জন্য হাসপাতালগুলিতে আলাদা ওয়ার্ড গঠনের অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, “মুসলিমদের হোলি, রাম নবমী ও দুর্গা পূজার মতো হিন্দু উৎসব নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সম্ভবত, তারা হিন্দুদের সঙ্গে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও আপত্তি করে। আমি মহারাজজিকে (মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ) অনুরোধ করব, যেন মুসলিমদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড বরাদ্দ করা হয়, যাতে তারা পৃথকভাবে চিকিৎসা নিতে পারে।”

তিনি আরও বিতর্কিত মন্তব্য করেন, “কে জানে, যদি তারা আমাদের দিকে থুতু ফেলে? আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

এই বক্তব্য জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বিধায়ক ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণা ও বিভাজন ছড়াচ্ছেন। তবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির একাংশ কেতকী সিংহের মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে।

হিন্দু বাহিনী নেতা হৃদেশ শর্মা মুসলিম ব্যক্তির নামাজ পড়াকে ‘নিষিদ্ধ কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়েছে, নতুন কোনো ধর্মীয় রীতি চালু করা যাবে না। হাসপাতালের ভেতরে নামাজ পড়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

ফিরোজাবাদ হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট (CMS) ডা. নবীন জৈন জানিয়েছেন যে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্মীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “নামাজ মসজিদে পড়াই শ্রেয়। হাসপাতালের ভেতরে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

বিজেপি বিধায়কের এই মন্তব্য ও হাসপাতালের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন যে, “রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা উন্নত করার বদলে বিজেপি অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক তৈরি করে সমাজকে বিভক্ত করছে।”

একজন এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের বদলে বিজেপি শুধু বিভাজনের রাজনীতি করছে!”

এই ঘটনায় রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এবং বিধায়কের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply