প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার বুধবার ঘোষণা করেছে, আগামী জাতীয় জনগণনার সাথে সারা দেশে জাতিগত শুমারি (caste census) করা হবে। বিজেপি সরকার আগে জাতি ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের বিরোধিতা করলেও, এ সিদ্ধান্তকে তাদের নীতিগত অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ পালাবদল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক চাপ এবং ভোটের মাঠে পরিবর্তিত বাস্তবতাই কারণ, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৯০-এর দশকে মণ্ডল কমিশনের সুপারিশে জাতি-ভিত্তিক সংরক্ষণ নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছিল বিজেপি, ‘মণ্ডল কা জবাব কমণ্ডল সে’ স্লোগান তুলে তারা জাতিগত বিভাজনের বিরুদ্ধে হিন্দু ঐক্যের কথা বলেছিল। কিন্তু আজ, বিজেপি নিজেই এমন এক উদ্যোগ নিচ্ছে, যা ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক ছবিকে বদলে দিতে পারে। অনেকেই একে ‘মণ্ডল ২.০’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
প্রধান বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই এর কৃতিত্ব দাবি করে দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বহুদিন আগেই নেওয়া উচিত ছিল। আমরা সংসদে স্পষ্ট বলেছিলাম, কাস্ট শুমারি হবে এবং ৫০% সংরক্ষণের সীমা তুলে দেওয়া হবে।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও একে বহু প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত বলে স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্থ রেড্ডি, যাঁর সরকার চলতি বছরই রাজ্যে জাতিগত সমীক্ষা করেছে, বলেন, “যা তেলেঙ্গানা আজ করে, ভারত তা আগামীকাল অনুসরণ করে।” তিনি জানান, তাঁদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজ্যের ৫৬.৩২% মানুষ পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
তবে ঘোষণা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। অনেকে মনে করছেন, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোটের আগে বিজেপি ওবিসি ভোটব্যাঙ্ককে মজবুত করতে চাইছে, আবার ঐতিহ্যগত উচ্চবর্ণের ভোটও হাতছাড়া না করে।
তবে এতে ঝুঁকিও রয়েছে। গত এক দশক ধরে বিজেপি জাতিগত বিভাজনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। নতুন শুমারি সংরক্ষণ বৃদ্ধির দাবি, ওবিসি সাব-ক্যাটেগরাইজেশন এবং সম্পদের নতুন বণ্টনের দাবিকে উসকে দিতে পারে, যা উচ্চবর্ণ ভোটব্যাঙ্কের সঙ্গে বিজেপির সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী, যিনি নিজেকে ওবিসি নেতার ছাপ দিয়েছেন, বরাবরই অনুপ্রবেশকারী ওবিসি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ রেখে চলেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই জাতিগত শুমারি ভারতের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যেমনটি মণ্ডল যুগে হয়েছিল।