জাতিগত জনগণনা চালানোর কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত ভারতের সমাজ-রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে — এবং এর সবচেয়ে স্পষ্ট প্রভাব পড়তে চলেছে উত্তরপ্রদেশে।
কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি)-র কাছে এই জনগণনা শুধু সংখ্যা গণনা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। ঐতিহাসিকভাবে এই দলগুলোর ভিত্তি অন্যান্য পিছিয়ে পরা সংখ্যালঘু শ্রেণী (OBC) ও দলিত সমাজে, এবং তারা বিশ্বাস করে যে এবার এই জনগোষ্ঠীগুলি তাদের জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও কল্যাণমূলক সুবিধার দাবি তুলতে পারবে।
এটি বিজেপির জন্য একটি বড় নীতিগত মোড়, কারণ এতদিন তারা জাতিগত জনগণনার দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসেছে, যুক্তি দিয়েছিল যে এতে সমাজে বিভাজন আরও বাড়বে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জনগণনার পক্ষে সওয়াল করা দলগুলোর কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ধাক্কা খাওয়ার পর এবং রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের লাগাতার আক্রমণের মুখে কেন্দ্র অবশেষে মত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে।
অখিলেশ যাদব এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। তিনি দ্রুত “জাতিগত ভিত্তিক ন্যায়” ও “বাস্তব প্রতিনিধিত্ব”-এর স্লোগান তুলেছেন। বিএসপিও এটির মধ্যে প্রান্তিকদের পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রে আনার সুযোগ দেখছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর নিজেদের পুনর্জীবিত করতে চায় বলেই।
এখন বিজেপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাদের মূলমন্ত্র “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ” বজায় রাখা, সেইসঙ্গে জনগণনা থেকে আসা জটিল ও প্রায়শই বিপরীতমুখী দাবিগুলি সামলানো। যদি এই তথ্য সংরক্ষণ নীতিতে পরিবর্তন বা নতুন কল্যাণমূলক প্রকল্পের দাবি তোলে, তবে এটি বিজেপির বৃহত্তর সামাজিক জোটেও ফাটল ধরাতে পারে।
২০২৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিগত জনগণনা রাজ্য রাজনীতিতে এক বিপ্লবী পর্বের ভিত্তি তৈরি করছে। বিজেপি কি তাদের সামাজিক জোট নতুনভাবে সাজিয়ে এই চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারবে, নাকি বর্ধিত জাতিগত মেরুকরণ বিজেপির হিন্দুত্ব রাজনীতির গল্পকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে, তা সময়ই বলবে। সেইসঙ্গে জনগণনার তথ্য প্রকাশ ও ব্যাখ্যা যে রাজনৈতিক রূপ নেবে, সেটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে বলা যায় — জাতিগত পরিচয় ও সামাজিক ন্যায় আবার উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরে এসেছে, যা ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে রাজনীতির ভবিষ্যত দিক নির্ধারণ করতে চলেছে।