সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সমগ্র দেশ শোকাহত। এই বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে একইসঙ্গে উঠে এসেছে একটি দীর্ঘদিনের প্রশ্ন—প্রতিবার এমন হামলার পর কেন ভারতীয় মুসলিমদের উপর অযাচিত চাপ সৃষ্টি হয়, যেন পুরো সম্প্রদায়কে দায়ী করা হচ্ছে? এক বিশিষ্ট চিন্তাবিদের ভাষায়, “প্রতিবার কোনো সন্ত্রাসী হামলার পর মুসলিমদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ও জোরালোভাবে নিন্দা জানানো যেন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। যেন তারা অপরাধী না হয়েও দোষ প্রমাণের চাপ অনুভব করেন, শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয় থাকার কারণে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমাদের আইন অনুযায়ী, পরিবারের এক সদস্যের অপরাধে গোটা পরিবারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় না। তাহলে একটি সম্প্রদায়কে কেন এমন দোষ চাপানো হয়? কেন এই নীরব ধরে নেওয়া হয় যে সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলাম স্বাভাবিকভাবে সম্পর্কিত?” তিনি আরও বলেন, “যদিও কিছু মুসলিম ব্যক্তি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তেমনিভাবে অনেক নির্দোষ মুসলিমকে ভুলভাবে অভিযুক্ত করে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছে। তদন্তে শেষে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হলেও, সমাজের চোখে তারা সন্দেহভাজন থেকে যান।” পাঞ্জাবের ৭০-৮০’র দশকের জঙ্গি কার্যকলাপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “তখন কেউ প্রত্যেক শিখ নাগরিককে দায়ী করেনি বা তাদের ভারতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। তাহলে মুসলিমদের ক্ষেত্রে এই দ্বৈত মানদণ্ড কেন?” তিনি উল্লেখ করেন, “যে কোনো সভ্য সমাজে সহানুভূতি ও শোক স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া। সন্ত্রাসবাদ যেমন অমানবিক, তেমনই এটিও অমানবিক যে একটি সম্প্রদায়কে প্রতিবার প্রমাণ করতে বাধ্য করা হয় তারা ভারতের প্রতি বিশ্বস্ত।” বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় গণতন্ত্রের সংকট নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মুসলিমরা যখন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেন, কিংবা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সংহতি জানান, তখনই তা ‘প্ররোচনামূলক’ বলে চিহ্নিত হয়। অন্যদিকে, যারা প্রকাশ্যে বিদ্বেষমূলক ভাষণ দেয়, তারা আইনের চোখে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। তিনি বলেন, “বন্ধুরা, আপনারা বারবার দেশপ্রেম প্রমাণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। যাদের বোঝাতে চাইছেন, তারা জানলেও মানতে চান না। তারা সেই লোক, যারা গান্ধী, নেহরু, আজাদদের অবদান অস্বীকার করে, আর শিল্পী বা বুদ্ধিজীবীদের দেশদ্রোহী তকমা দেয়—যার ব্যতিক্রম শুধু এ.পি.জে. আবদুল কালাম।” ১৯৯৩ সালে তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর টি.পি. তেওয়ারীর সঙ্গে এক ব্যক্তিগত আলাপচারিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাঁর উপদেশ ছিল—‘হুব্বুল ওয়াতানী সে কাম লেন’, অর্থাৎ দেশপ্রেম থেকেই কাজ করুন। যেমন রাহিম, রাসখান, বেকাল উতসাহী তাঁদের কবিতায় গঙ্গা-যমুনার কথা বলতেন।” শেষমেশ তিনি বলেন, “দেশপ্রেম প্রকাশের সেরা উপায় হচ্ছে নীরব, ধারাবাহিক অবদান। বারবার বাধ্য হয়ে কিছু প্রমাণ করার চেয়ে, নিজের কাজের মাধ্যমে দেশপ্রেম দেখান।”


Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply