ভোপাল: জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগাঁও হামলার পর সারা দেশে মুসলিমদের উপর চলতে থাকা হুমকি, হিংসা ও বৈষম্যের আবহে এবার খুনের হুমকির মুখে পড়লেন ভোপাল সেন্ট্রালের কংগ্রেস বিধায়ক ও বর্ষীয়ান মুসলিম নেতা আরিফ মাসুদ। এই হুমকি এসেছে সরাসরি বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কৃষ্ণ গাডগের কাছ থেকে। মঙ্গলবার ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, ভোপালে হনুমান জন্মোৎসবের এক সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে কৃষ্ণ গাডগে বলেন, “এটা পাকিস্তানের কথা নয়, পাকিস্তানের এজেন্টরা এখানেই এই মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বলছি—এবার যদি কেউ ঝামেলা করার চেষ্টা করে, আরিফ মাসুদ ও তার ধর্মবিরোধী অনুগামীদের আমরা ছাড়ব না… এখানেই চোকাবো।” তিনি আরিফ মাসুদকে “পাকিস্তানি এজেন্ট” বলেও কটাক্ষ করেন। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে প্রবল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মাসুদের সমর্থকরা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্তে নামে। উল্লেখ্য, কৃষ্ণ গাডগে মধ্যপ্রদেশ বিজেপির কার্যকরী কমিটির সদস্য। অভিযোগের পরও তিনি ফেসবুকে স্পষ্ট লেখেন, “আমাদের সমাবেশ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আমি বলেছি আরিফ মাসুদ একজন পাকিস্তানি এজেন্ট এবং ওর জীবনের হুমকি রয়েছে। এখন তার সমর্থকরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, মানে তারা পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলছে।” এই ঘটনার আগে একই ধরনের খুনের হুমকি দেন বিজেপি যুবনেতা সাচিন রঘুবংশী। তিনি ফেসবুকে লেখেন, “আমি কাল আরিফ মাসুদকে মেরে ফেলব। কে জামিন করাবে? দেশপ্রেমে মরতে ও মারতে ভালোবাসি। যারা দেশের শত্রু, তাদের শেষ করব।” তার এই উস্কানিমূলক পোস্টের পর মাসুদের ঘনিষ্ঠ ও প্রাক্তন কাউন্সিলর মেওলাল কান্নারজি শাহজাহানাবাদ থানায় FIR দায়ের করেন। FIR-এর পর সাচিন পোস্টটি মুছে ফেলেন। উল্লেখযোগ্য যে, সাচিনের প্রোফাইলে তাকে বিজেপি বিধায়ক রমেশ্বর শর্মার সঙ্গে দেখা যায়, যিনি বারবার মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং টুইটার-এ লেখেন, “@CP_Bhopal কি আরিফ মাসুদের নিরাপত্তা নিয়ে ‘থ্রেট পারসেপশন’ মূল্যায়ন করে নিরাপত্তা বাড়াবেন? বিজেপি কি সাচিন সুর্যবংশীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে?”আরিফ মাসুদ বলেন, এই হুমকি একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বরাবর হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং বিজেপির বর্ণবিদ্বেষী রাজনীতির বিরোধিতা করেছেন বলেই আজ তাঁকে টার্গেট করা হচ্ছে। পাহেলগাঁও হামলার পর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের উপর হামলা, চিকিৎসা থেকে বঞ্চনা, আর্থিক বয়কট, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণার সঞ্চার—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে একজন নির্বাচিত বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য খুনের হুমকি, তাও শাসক দলের নেতার মুখে—ভারতের গণতন্ত্র ও সংবিধানের জন্য এক গভীর সংকেত বহন করছে।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply