বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল শাইস্তা। ব্যাগে নিজের নোটবুকটি সাবধানে রেখে দিয়েছিল, যেন কিছু পড়ে না যায়। আসরের নামাজের আজান শেষ হয়েছে, আর জামাত শুরু হতে চলেছে। মসজিদের নতুন তৈরি হওয়া নারীদের অংশে ঢুকে তিনি কয়েক মুহূর্ত দাঁড়ালেন। ঘরের ঠান্ডা বাতাস যেন তাকে প্রশান্তি এনে দিল। অন্যান্য ছাত্রীদের সঙ্গে নামাজের জন্য হাত তুলে দাঁড়ানোর সময় শাইস্তার মনে এক ধরনের শান্তি এবং আত্মিক সম্প্রীতির অনুভূতি সৃষ্টি হলো। মনে হলো, মসজিদের এই পরিবেশ আর জামাতে নামাজ পড়া যেন রমজানের আধ্যাত্মিকতাকে আরও গভীর করে তোলে। এই বছর, দিল্লির মুসলিম-প্রধান ওখলা অঞ্চলের মসজিদগুলোতে নারীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। তরুণ ছাত্রী, কর্মজীবী নারী, গৃহিণী, এমনকি বয়স্ক নারীরাও মসজিদে এসে নামাজ আদায় করছেন, কোরআন তেলাওয়াত করছেন এবং আধ্যাত্মিক চর্চায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শুক্রবার, ১৪ মার্চ, আবুল ফজল এলাকার জামিয়াত উল-হিন্দ মারকাজের বেজমেন্টে অসংখ্য নারী জোহরের নামাজ আদায় করেছেন। অন্যদিকে, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ৮ নম্বর গেটের ছোট মসজিদে সম্প্রতি নির্মিত নারীদের জন্য আলাদা অংশটি ছাত্রীদের জন্য বড়ই আরামদায়ক হয়ে উঠেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্লস কমন রুম এবং হোস্টেলগুলোতেও রমজানের পবিত্রতা উদযাপিত হচ্ছে। ছাত্রীদের দলবদ্ধভাবে নামাজ আদায় এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাটলা হাউসের মসজিদগুলোতেও নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছোট শিশুরা তাদের মায়েদের সঙ্গে মসজিদে আসছে, আর তাদের সরল হাসি এবং আনন্দ মসজিদের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলছে। এটি শুধুমাত্র নামাজ আদায়ের সুবিধা নয়, বরং কর্মজীবী নারী এবং পূর্ণ সময়ের ছাত্রীদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক সম্প্রীতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। যখন পুরো দেশ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং ইসলামোফোবিয়ার সঙ্গে লড়াই করছে, তখন নারীদের জন্য মসজিদের দরজা ধীরে ধীরে খুলে যাওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। রমজানে পুরুষ-কেন্দ্রিক চিত্র থেকে সরে এসে, এই পরিবর্তন নারীদের ধর্মীয় জীবনের অংশীদারিত্বের সুযোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে। এটি মুসলিম নারীদের জন্য ধর্মীয় ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। রমজান মাসের এই আধ্যাত্মিক পরিবেশে, মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং নারীদের জন্য আলাদা নামাজের স্থানগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ এক নতুন মাত্রা যোগ করছে। এটি শুধু আধ্যাত্মিকতাকে উদযাপন নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতির একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করছে।
Facebook Comments Box
Post navigation
Previous Post
