বৃন্দাবন, ২৯ এপ্রিল — জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ছে। এরই মধ্যে, ডানপন্থী কিছু গোষ্ঠী বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারি মন্দিরে যুক্ত মুসলিম ব্যবসায়ী ও কারিগরদের বয়কটের আহ্বান জানায়। তবে এই দাবি দৃঢ়ভাবে খারিজ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। সোমবার টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্দিরের পুরোহিত ও প্রশাসনিক কমিটির সদস্য জ্ঞানেন্দ্র কিশোর গোস্বামী জানান, “এই ধরনের বয়কট অবাস্তব এবং একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।” তিনি আরও বলেন, “মুসলিম কারিগর ও বুননশিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরের পোশাক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। এমনকি অনেকে বাঁকে বিহারি দেবের প্রতি ভক্তি রেখেও মন্দিরে আসেন।” ২২ এপ্রিলের পহেলগাম হামলার পর মথুরা ও বৃন্দাবনের কিছু গোষ্ঠী হিন্দু দোকানদার ও তীর্থযাত্রীদের মুসলিমদের সঙ্গে ব্যবসা না করার অনুরোধ জানায়। একইসঙ্গে মুসলিম দোকানিদের নাম ফলকে বড় করে উল্লেখ করার দাবিও তোলা হয়, যা অনেকের মতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আলাদা করে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গোস্বামী বলেন, “বৃন্দাবনে বহু জটিল মুকুট ও অলঙ্কার মুসলিমদের হাতে তৈরি হয়। যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত—আমরা সরকারের পাশেই আছি। কিন্তু বৃন্দাবনে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে শান্তিতে থাকে।” মন্দির সংলগ্ন মুসলিম দোকানিরাও মন্দিরের অবস্থানে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ‘স্টার মুকুট’ নামক দোকানের মালিক জাভেদ আলি জানান, “কয়েকজন এসে নামের সাইনবোর্ড লাগানোর কথা বলেন। আমি গত ২০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। আমার বাবা ছিলেন একজন দর্জি। আমাদের লুকোনোর কিছু নেই। বাঁকে বিহারির কৃপায় সবসময়ই এখানে শান্তি বিরাজ করে।” পাশের দোকানের মালিক নিখিল আগরওয়াল বলেন, “দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সবসময় সহযোগিতা ছিল। কোনো সমস্যা হয়নি কখনো।” স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখনো পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি হুমকি বা ভয় দেখানোর বিষয়ে। এই ঘটনায় যেখানে ধর্মের নামে বিভাজনের চেষ্টা চলছে, বাঁকে বিহারি মন্দিরের এই অবস্থান এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হিসেবে উঠে এসেছে—এক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিচ্ছবি।


Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply