ভারতীয় নাগরিক ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া-র প্রাক্তন ছাত্র বদর খান সুরিকে ঘিরে পরিস্থিতি ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। শুক্রবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA) জানিয়েছে, বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের স্বাগতিক দেশের আইন এবং নিয়ম-কানুন মানা বাধ্যতামূলক। সুরি, যিনি বর্তমানে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে যুক্ত, তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ, তিনি প্যালেস্টাইন সংহতি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বদর খান সুরিকে সোমবার রাতে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের রসলিন এলাকায় তার বাড়ির বাইরে থেকে আটক করা হয়। এই গ্রেপ্তারির দিনেই ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় আক্রমণ চালায়, রমজান মাসে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার প্রাক্তন ছাত্র সুরি একজন নির্লিপ্ত ও অধ্যবসায়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত। দিল্লির বাটলা হাউসে বড় হওয়া সুরি, তার জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় সেখানে কাটিয়েছেন। তার বন্ধু আমির খান জানিয়েছেন, সুরি একজন লাজুক এবং সদয় ব্যক্তি। তিনি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মাফেজ আহমদ সালেহকে বিয়ে করেন, যিনি গাজায় বেড়ে উঠেছেন। সালেহ এক আবেদনে লিখেছেন, “আমাদের সন্তানরা তাদের বাবাকে ভীষণ মিস করছে। তারা প্রতিদিন জানতে চায়, বাবা কখন ফিরবেন। আমি ওদেরকে বাস্তব সত্য বলার সাহস পাই না। আমি নিজেও দারুণ আতঙ্কে আছি।” সম্প্রতি সালেহের পরিবারের ফিলিস্তিন সংযোগ নিয়ে ডানপন্থী মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর, তাকে লক্ষ্য করে প্রচার এবং বিতর্ক শুরু হয়। সালেহের বাবাকে হামাসের নেতারূপে চিহ্নিত করে কিছু ডানপন্থী মহল তার বিতাড়ন দাবি তোলে। সুরি একজন পরিশ্রমী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এক বন্ধুর মতে, এই গ্রেপ্তারি তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার একটি ষড়যন্ত্র। সুরির গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্র সংগঠন এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, “সুরির কাজ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সত্যের সন্ধানে নিবেদিত। তাকে আটকানো কেবল তার ওপর নয়, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের ওপর আক্রমণ।”
বদর খান সুরির আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগ, তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফেডারাল আদালত নির্দেশ দেয়, মামলা চলাকালীন সুরিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা যাবে না । এই ঘটনায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সুরি বা তার পরিবার ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে সুরির ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, সাহায্যের জন্য দূতাবাসে ইমেল করা হয়েছিল।