সোমবার সুপ্রিম কোর্ট অন্ধ্রপ্রদেশের এক ডেপুটি কালেক্টরকে তীব্র ভর্ৎসনা করে, যিনি তহসিলদার পদে থাকাকালীন গুন্টুর জেলায় হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বস্তিবাসীদের কুঁড়েঘর জোরপূর্বক ভেঙে দেন, যার ফলে বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে একটি বিশেষ অনুমতি পিটিশন (SLP) শুনানি করছিল, যেখানে হাইকোর্টের দেওয়া রায় চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট ওই কর্মকর্তাকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দুই মাসের সাধারণ কারাদণ্ড ও ২,০০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি বি.আর. গাভাই এবং এ.জি. মাসীহ-এর বেঞ্চ মৌখিকভাবে জানায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে জেল খাটতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত সকলের কাছে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তার পদাবনতি হতে পারে। আদালত জানায়, “সাধারণ পরিস্থিতিতে আমরা এই SLP গ্রহণ করতাম না, কারণ আবেদনকারী হাইকোর্টের ১১.১২.২০১৩ তারিখের স্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করেছেন। তবে কিছুটা সহানুভূতির ভিত্তিতে আমরা নোটিশ জারি করছি, ততদিন আদেশ স্থগিত থাকবে।” বিচারপতি গাভাই তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা তাকে এখনই হেফাজতে নিতে পারি। কেউ হাইকোর্টের মর্যাদা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তার আচরণ কীভাবে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?” আবেদনকারীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী দেবাশীষ ভরুকা দয়া প্রার্থনা করে বলেন, তার মক্কেলের আচরণ ক্ষমার অযোগ্য হলেও আদালতের কাছে অনুরোধ জানানো হচ্ছে কিছুটা নমনীয়তা দেখাতে। জবাবে বিচারপতি গাভাই বলেন, “কোন ভিত্তিতে দয়া? তিনি কি নিজেকে হাইকোর্টের ঊর্ধ্বে ভাবেন?” এরপর তিনি আদালতে উপস্থিত তহসিলদারকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বস্তিবাসীদের দখলে বিঘ্ন ঘটাননি? “যখন তিনি এতজন বস্তিবাসীকে গৃহহীন করে দিচ্ছিলেন, তখন তাদের সন্তানদের কথা তার মনে পড়েনি?”, মন্তব্য করেন বিচারপতি গাভাই। ১৩.০৯.২০১৩ তারিখে হাইকোর্টের একক বেঞ্চ আবেদন নিষ্পত্তি করে নির্দেশ দিয়েছিল, তহসিলদার যেন আবেদনকারীদের ঘর-বাড়ির জন্য জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত আবেদন বিবেচনা করেন এবং দুই মাসের মধ্যে তা জানিয়ে দেন। একইসঙ্গে বলা হয়, যদি আবেদনকারীরা জমির দখলে থাকেন, তবে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না। তা সত্ত্বেও, তহসিলদার ০৬.১২.২০১৩ ও ০৮.০১.২০১৪ তারিখে তাদের ঘরবাড়ি জোরপূর্বক উচ্ছেদ করেন। একক বেঞ্চ জানায়, ০৮.০১.২০১৪ তারিখে তহসিলদারের অনুরোধে ৮৮ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল, যা আদালতের আদেশের সরাসরি অবমাননা। ফলে তাকে দুই মাসের সাধারণ কারাদণ্ড ও ২,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত রায় দেয়নি, তবে স্পষ্ট করেছে যে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply