প্রাথমিক বিদ্যালয় মালোঘাটের সহকারী শিক্ষিকা জেবা আফরোজের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে, যদিও অনেকের মতে, তাঁর পোস্টের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তিনি ভারতের মুসলিমদের দেশভক্তি রক্ষার চেষ্টার জন্য অন্যায়ভাবে টার্গেট হচ্ছেন। জেবা তাঁর এখন মুছে ফেলা পোস্টে লিখেছিলেন, ‘‘দেশপ্রেমিকরা সবসময় মুসলিম, আর বিশ্বাসঘাতকরা সবসময় সংঘী।” পাশাপাশি, আগ্রায় গুলফাম নামে এক যুবকের হত্যাকাণ্ডেরও তিনি তীব্র নিন্দা করেছিলেন। তাঁর পোস্টটি মুসলিমদের দেশভক্তি নিয়ে বারবার ওঠা প্রশ্নের জবাব দিতে লেখা হলেও, ডানপন্থী মহলে তা উস্কানিমূলক বলে চিহ্নিত হয় এবং চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে। হোয়াটসঅ্যাপ এবং স্থানীয় ফোরামে পোস্টটির স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে, জনমত তৈরি হয় তাঁর বরখাস্তের দাবিতে। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেবাকে বরখাস্ত করেন, জানান, ‘‘একজন শিক্ষকের উচিত শান্তি ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। এই ধরনের মন্তব্য পরিষেবা আচরণবিধির লঙ্ঘন।”
এই বরখাস্তের ঘটনায় বৃহত্তর বিতর্ক শুরু হয়েছে। নাগরিক অধিকার কর্মী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলছেন, জেবার পোস্ট রাজনৈতিক অভিব্যক্তি, ঘৃণামূলক ভাষা নয়। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, নিয়মের প্রয়োগ কি সবার ক্ষেত্রেই সমান? কারণ বহু ঘৃণামূলক পোস্টের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘‘প্রতিদিন মুসলিমদের দেশদ্রোহী বলা হয়, তখন প্রশাসন চুপ থাকে। আর আমরা যখন আমাদের দেশপ্রেমের কথা বলি, তখন তা সাম্প্রদায়িকতার তকমা পায়। এটি দ্বিচারিতা।” আইন বিশেষজ্ঞ ইরফান হায়দার জানান, ‘‘সরকারি কর্মীদের নিরপেক্ষ থাকা উচিত, তবে নিয়ম সবার জন্য সমান হতে হবে। রাজনৈতিক বক্তৃতা সংবিধানিক অধিকার, যতক্ষণ না তা হিংসা উসকে দেয়।” বিগত কয়েক বছরে শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বহু মুসলিম পেশাজীবীকে তাঁদের পরিচয় রক্ষায় মত প্রকাশের জন্য শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে — জেবার ঘটনা সেই ধারারই অংশ।
জেবার সহকর্মীরা তাঁকে সহানুভূতিশীল ও সৎ বলে বর্ণনা করেছেন, ১২ বছরের কর্মজীবনে তাঁর কোনো কলঙ্কের ইতিহাস নেই। বরখাস্তের ফলে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি, তাঁর পরিবারও হতবাক।
তদন্ত চলছে, তবে এই বিতর্ক এক বড় প্রশ্ন উসকে দিয়েছে: ভারতের মুসলিমরা কি তাঁদের দেশপ্রেম এবং যন্ত্রণার কথা বিনা ভয়ে বলতে পারবেন? অনেকের কাছে জেবার ঘটনা কেবল এক ফেসবুক পোস্টের নয়, বরং একটি মেরুকৃত ভারতের মতপ্রকাশ ও পরিচয়ের সংকুচিত পরিসরের প্রতীক।