ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT) সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মুঘল ও দিল্লি সালতনতের উল্লেখ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব ইন্ডিয়া (SIO)। সংগঠনটি একে “জোরপূর্বক গেরুয়াকরণ” এবং “শিক্ষাগত বিকৃতি” বলে আখ্যা দিয়েছে।

সংগঠনের মতে, মুঘল ও দিল্লি সালতানাত এর অবদান ভারতের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, এবং তাদের সম্পূর্ণ মুছে ফেলা “ঐতিহাসিক সত্যের ওপর নজিরবিহীন আক্রমণ”।

এসআইও-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি কোনো একাডেমিক সংশোধন নয়; এটি গেরুয়াকরণ—একটি সচেতন প্রচেষ্টা, যা শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক করতে, ইতিহাসকে বিকৃত করতে এবং তরুণদের মনকে শাসক ডানপন্থী আদর্শের উপযোগী করে তুলতে চায়।”

এছাড়াও, নতুন বইগুলিতে চারধাম যাত্রা, জ্যোতির্লিঙ্গ, শক্তিপীঠের মতো ধর্মীয় তীর্থযাত্রার “অতিরিক্ত গৌরবগান” নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এসআইও।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “ভারতের বৈচিত্র্যময় অতীতকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার বদলে, এখন একটি একপাক্ষিক বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে, যা শতাব্দীর পর শতাব্দীর বহুত্ববাদী অবদান ও বঞ্চনার ইতিহাসকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।”

নতুন পাঠ্যপুস্তকে বর্ণ-জাতি ব্যবস্থাকে প্রাথমিকভাবে “সামাজিক স্থিতিশীলতার উৎস” হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, এবং বলা হয়েছে, ব্রিটিশ শাসনের সময় সেটি কঠোর হয়ে ওঠায় সামাজিক বৈষম্য তৈরি হয়। এসআইও অভিযোগ করেছে, এটি আসলে জাতিভিত্তিক শোষণকে হালকা করে দেখানো এবং বৈধতা দেওয়ার এক চেষ্টামাত্র।

সংগঠনটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ইতিহাসবিদ এবং সচেতন নাগরিকদের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “শিক্ষার এই ধারাবাহিক ধ্বংসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

এনসিইআরটির এই পাঠ্যক্রম সংস্কার বিভিন্ন মহল থেকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে, যা শাসক দলের “গেরুয়া এজেন্ডা”-র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কেরালার শিক্ষামন্ত্রী ভি. শিবনকুট্টি জানিয়েছেন, এনসিইআরটির বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি মে মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গভর্নিং কাউন্সিল বৈঠকে তোলা হবে। তিনি বলেন, “পাঠ্যবইয়ে ঐতিহাসিক সত্য বদলানো একাডেমিকভাবে অমর্যাদাকর এবং এটি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করবে, যা শিক্ষাক্ষেত্রের ক্ষতি ডেকে আনবে।”


Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply