পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় নিহত পর্যটকদের স্ত্রীরা “যুদ্ধ করতে পারতেন”—এই বেদনাদায়ক ও বিতর্কিত মন্তব্য করে আগুন জ্বালালেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ রাম চন্দর জাংরা। মন্তব্যের জেরে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে এবং কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রকাশ্য ক্ষমা ও জাংরাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।
হরিয়ানার ভিওয়ানিতে অহল্যাবাই হোলকরের ৩০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় জাংরা বলেন, “যেসব নারীরা নিজেদের স্বামীকে হারিয়েছেন, তাদের ভেতরে ‘বীরাঙ্গনার’ মানসিকতা থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না।”
তিনি বলেন, “নারীরা যদি অহল্যাবাই হোলকরের ইতিহাস পড়তেন, তাহলে কেউ তাঁদের সামনে স্বামীদের হত্যা করতে পারত না।”
“আমাদের মানুষ হাত জোড় করে মরেছে। সন্ত্রাসবাদীরা দয়া করে না,”—এমন বয়ান দিয়ে জাংরা আরও বলেন, “যদি পর্যটকরা আগ্নিবীর প্রশিক্ষণ পেত, তাহলে তিনজন জঙ্গি ২৬ জনকে হত্যা করতে পারত না।”
জাংরার দাবি, “যদি তারা লড়াই করত, তাহলে হতাহতের সংখ্যা কম হত।”
এই বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন,
“বিজেপি নেতারা ক্রমাগত ভারতীয় সেনা ও শহীদদের অপমান করছেন, যা তাদের ক্ষুদ্র ও নির্মম মানসিকতা প্রকাশ করে।”
তিনি বলেন, “পহেলগাঁও হামলায় নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য শহীদদের পরিবারকে দায়ী করার মধ্যে বিজেপির অমানবিক মুখ উন্মোচিত হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে বিজেপি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে শহীদদের স্ত্রীদের দোষারোপ করতেও পিছপা হচ্ছে না।”
জয়রাম রমেশ আরও বলেন, “মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ কর্নেল কুরেশিকে ‘জঙ্গির বোন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। উপ-মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ দেবদা সেনাবাহিনীকে মোদীর পায়ে নতজানু বলেছিলেন। এদের বিরুদ্ধেও এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন জাংরার মন্তব্য সেই লজ্জাজনক ধারাকেই আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রমেশ। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে নীরব কেন? এই নীরবতা কি বিজেপির মৌন সম্মতি?”
ওড়িশার কংগ্রেস নেতা নিরঞ্জন পট্টনায়ক আরও কড়া ভাষায় বলেন,
“বিজেপি নেতারা শহীদদের অপমান করা, এবং তাদের শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি অসম্মান দেখানো থামাচ্ছেন না। রাম চন্দর জাংরার এই মন্তব্য শুধু শহীদদের অসম্মান নয়, বরং বিধবাদেরই দায়ী করে তুলছে—এটা জঘন্য।”
তিনি আরও বলেন, “যারা সবকিছু হারিয়েছে, তাদের দুঃখ নিয়ে উপহাস করছে বিজেপি। এর চেয়ে নীচতা আর কিছু হতে পারে না।”
কংগ্রেসের দাবি:
- প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে
- বিজেপি সাংসদ রাম চন্দর জাংরাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে
- সেনা ও শহীদদের সম্মান রক্ষা করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে
তীব্র নিন্দা ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও। অনেকেই বলছেন, শহীদ পরিবারগুলোর যন্ত্রণাকে হেয় করা আর রাজনীতির মানবিকতা বিসর্জন—এই দুইয়ের ভয়ঙ্কর মিশেল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিজেপির নেতাদের ভাষ্যে।