দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পাহেলগামের বিখ্যাত বৈসারণ উপত্যকায় মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে বুধবার সম্পূর্ণ বন্ধ পালন করল কাশ্মীর উপত্যকা। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন, যাঁদের অধিকাংশই পর্যটক। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই হামলার প্রতিবাদে ৩৫ বছরে এই প্রথমবার সন্ত্রাসবিরোধী উপত্যকা-জুড়ে এমন একতা ও সম্পূর্ণ বন্ধ দেখা গেল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রতিবাদে সরব হয়েছে উপত্যকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ধর্মীয় সংগঠন ও ব্যবসায়িক মহল। সম্পূর্ণ বন্ধের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি), পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), পিপলস কনফারেন্স এবং আপনি পার্টি। হুরিয়ত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন মুতাহিদা মজলিস-ই-উলেমাও (এমএমইউ) শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে। মিরওয়াইজ বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরের ইসলামিক সম্প্রদায় এই ভয়ঙ্কর অপরাধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আবেদন জানায়।” শ্রীনগর সহ উপত্যকার সর্বত্র বন্ধের প্রভাব চোখে পড়ে। অধিকাংশ দোকান, পেট্রোল পাম্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, চালু ছিল শুধু প্রয়োজনীয় পরিষেবা। গণপরিবহণ সীমিত ছিল, তবে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। বেসরকারি স্কুলগুলি বন্ধ ছিল, যদিও সরকারি স্কুল খোলা ছিল। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় এদিনের সব পরীক্ষা স্থগিত করে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও পর্যটন সংস্থা, যেমন কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং কাশ্মীর ট্রেডার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স ফেডারেশন,ও এই প্রতিবাদে শামিল হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাইভেট স্কুল অ্যাসোসিয়েশন (PSAJK) জানিয়েছে, সব বেসরকারি স্কুল বন্ধ থাকবে এই ভয়াবহ ঘটনার প্রতিবাদ ও শোক প্রকাশে। উপত্যকার বিভিন্ন জেলায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও মোমবাতি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদকারীরা নিরপরাধ মানুষের উপর এই ধরনের সহিংসতা বন্ধের জোর দাবি জানায়। ঘটনার পর কাশ্মীর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থান, পর্যটন কেন্দ্র এবং শহরের প্রবেশপথে মোতায়েন করা হয়েছে বাহিনী। বড় রাস্তাগুলিতে বসানো হয়েছে চেকপয়েন্ট, এবং বৈসারণে সন্ত্রাসীদের খোঁজে চলছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান।
Facebook Comments Box