আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি এক আলোচনায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী স্পষ্ট করেছেন, ১৯৮৪ সালের শিখ গণহত্যাসহ কংগ্রেস পার্টির অতীতের ভুলগুলির জন্য তিনি দায় স্বীকার করতে প্রস্তুত।
২১ এপ্রিল ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশুতোষ ভার্শ্নির সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণের সময় এক শিখ শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে রাহুল এই মন্তব্য করেন। পুরো আলোচনা পরে ইনস্টিটিউটের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পরে দিল্লিতে শিখ-বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন কংগ্রেস নেতার প্ররোচনায় সহিংস হামলায় প্রায় ৩,০০০ শিখ নিহত হন, বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়।
শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রাহুল বলেন, “আমি মনে করি না শিখদের কোনো কিছু ভয় দেখাতে পারে। আমার বক্তব্য ছিল, আমরা কি এমন এক ভারত চাই যেখানে মানুষ তাদের ধর্ম প্রকাশ করতে অস্বস্তি বোধ করবে?”
তিনি আরও বলেন, “কংগ্রেস পার্টির ভুলগুলোর অনেকটাই আমার সময়ের আগে হয়েছে, তবে আমি খুব খুশি হবো কংগ্রেসের ইতিহাসের সমস্ত ভুলের জন্য দায় গ্রহণ করতে।” রাহুল আরও বলেন, “আমি প্রকাশ্যে বলেছি, [১৯৮০-এর দশকে] যা ঘটেছিল তা ভুল ছিল।”
শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে রাহুল জানান, “আমি বহুবার স্বর্ণমন্দির গিয়েছি, ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো, ভালোবাসাপূর্ণ।”
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে, প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সাজ্জন কুমারকে ১৯৮৪-র দাঙ্গায় জড়িত থাকার দায়ে দিল্লি আদালত আজীবন কারাদণ্ড দেয় — এটি তার দ্বিতীয় দোষসিদ্ধি।
আলোচনায় রাহুল ভারতের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক উত্তরাধিকারের কথাও বলেন। তিনি বলেন, “বুদ্ধ, গুরু নানক, কর্ণাটকের বসবা, কেরালার নারায়ণা গুরু, ফুলে, গান্ধী, আম্বেদকর— এরা সকলেই এক স্রোতের অংশ।” তিনি আরও বলেন, “এরা কেউই সংকীর্ণমনস্ক নন… আমাদের সংবিধানে যাদের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয়েছে, তারা সবাই একই কথা বলেছেন— সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা, সত্য ও অহিংসার মাধ্যমে।”
ভারতীয় পরিচয়ের ভিত্তি হিসেবে তিনি এই মূল্যবোধগুলোর কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, “এটাই আমার কাছে ভারতীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ভিত্তি।” রাহুল রামচন্দ্রের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “লর্ড রাম ছিলেন ক্ষমাশীল, সহানুভূতিশীল।”
বিজেপির হিন্দুত্বের ধারণার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি যা দেখি, বিজেপি যা বলে, সেটিকে হিন্দুধর্মের ধারণা বলে মনে করি না। আমার কাছে হিন্দুধর্ম অনেক বেশি বহুত্ববাদী, উদার, সহিষ্ণু এবং উন্মুক্ত।” বিজেপিকে “ফ্রিঞ্জ মুভমেন্ট” হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি বিজেপির ধারণাকে হিন্দু ধারণা বলে দেখি না।”
এদিকে বিজেপি মুখপাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারি পিটিআইকে বলেছেন, “হিন্দু সন্ত্রাস” আখ্যা দেওয়া, রামচন্দ্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করা এবং অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ বিলম্বিত করা— এসব কংগ্রেসের “হিন্দুবিরোধী” অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, “এখন চীন ও পাকিস্তান মিলে গেছে। সুতরাং আমাদের যেকোনো সংঘাত একসাথে দু’জনের সঙ্গেই হবে।”
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে রাহুল বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প দর কষাকষি করছেন। আমাদেরও সেইভাবে পাল্টা দর কষতে হবে।” তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমরা জানি না ভারত কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, কারণ সরকার আমাদের এসব জানায় না।”