কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলার ভয়াবহ পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে পাঁচ সদস্যের তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) প্রতিনিধি দল সেখানে পৌঁছে স্থানীয় মানুষজনের পাশে দাঁড়াল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাংসদ সাগরিকা ঘোষ, নদিমুল হক, মমতা ঠাকুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া।

প্রতিনিধি দলটি সীমান্তবর্তী গ্রামের অবহেলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেছে, এসব গ্রাম এখন ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে। তাই জরুরি ভিত্তিতে বাঙ্কার, হাসপাতাল ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ প্যাকেজ প্রয়োজন।

তারা ২২ এপ্রিলের পাহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। ৮ থেকে ১০ মে-র মধ্যে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ২৭ জন প্রাণ হারান, আহত হন ৭০ জনেরও বেশি।

প্রতিনিধি দলটি প্রথমে ২২ এপ্রিলের হামলায় নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার অমরজিত সিংহের বাড়িতে যান। পরে পুঞ্চের সেই ক্রিস্ট স্কুলে যান, যেখানে গোলার আঘাতে মারা যায় যমজ ভাই-বোন যায়ন আলি ও জোয়া। তারা যান জিয়া-উল-উলুম মাদ্রাসায়ও, যেখানে নিহত শিক্ষক ক্বারী মোহাম্মদ ইকবালকে একাধিক সংবাদমাধ্যমে ভুলভাবে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল।

রাজৌরি সরকারি মেডিক্যাল কলেজেও যান তারা। সেখানে চিকিৎসাধীন আহতদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। ১২ বছরের রুকসানার সঙ্গে কথা বলেন, যার পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, “আমরা এখানে সহানুভূতির বার্তা দিতে এসেছি। এইসব পরিবারকে বলতে এসেছি—আপনারা একা নন। বাংলার মানুষ এবং ভারতের মানুষ আপনাদের পাশে আছে।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই নিরীহ মানুষগুলো আরও ভালো সুরক্ষা পেল না কেন? সীমান্তের প্রথম সারিতে থেকেও তারা সম্পূর্ণ অসহায়!”

রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “শেষ দু’ঘণ্টার অভিজ্ঞতা আমাদের আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। মমতা ব্যানার্জি আমাদের পাঠিয়েছেন, যাতে আমরা শোকাহত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, “এখানকার দুঃখ-কষ্ট জাতীয় মিডিয়ার কাছে অদৃশ্য। দিল্লি-নয়ডার মিডিয়া এ ট্র্যাজেডিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেছে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ বলেন:


“এই সঙ্কটের সময়ে সহমর্মিতার ছোঁয়া সবচেয়ে জরুরি। প্রতিনিধি দলের কাজ আমাদের দায়বদ্ধতা ও মানবিকতা তুলে ধরেছে। আমি গভীর কৃতজ্ঞ।”

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তৃণমূল কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনাদের আগমনে মনে হয়েছে, আমরা একা নই।”

পুঞ্চের বিধায়ক আজাজ আহমেদ জান ও ‘উপযুক্ত সময়ের সাহসী পদক্ষেপ’ বলে দলটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

জম্মু-কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এক্স-এ তৃণমূলকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখে:

“যেখানে অনেকেই চোখ ফিরিয়ে নেয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে—রাজনীতি মানে মানবিকতা নয়, মানবিকতাই রাজনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি।”

তারা আরও লেখে, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে, যাদের স্বপ্ন আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি—তৃণমূল বুঝিয়ে দিয়েছে, এই দেশের প্রতিটি জীবন, প্রতিটি স্বপ্ন মূল্যবান।”

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply