দক্ষিণ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে বেআইনি পাচার সাম্রাজ্যের বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কাপড়, জীবনদায়ী ওষুধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য পাচারের পাশাপাশি এখন গরু পাচারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শাসক দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একাংশকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে এই অবৈধ ব্যবসা।সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারির মাঝেও পাচার!দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার অব্যাহত। অথচ কাঁটাতারের সীমান্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এই পাচার সম্ভব হচ্ছে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। শুধু ভারতীয় পণ্য নয়, বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন অবৈধ জিনিসপত্র অনায়াসে ঢুকছে এই সীমান্ত দিয়ে।স্থানীয়দের অভিযোগ, যখন পাচারকারীরা সক্রিয় হয়, তখনই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারি রহস্যজনকভাবে ঢিলেঢালা হয়ে যায়। গুঞ্জন রয়েছে, গোপন লেনদেনের মাধ্যমে সীমান্তরক্ষীদের একাংশ পাচারকারীদের সহযোগিতা করছে।বিলোনিয়ায় পুলিশের অভিযান, ধরা পড়ল গরু বোঝাই গাড়িগত বৃহস্পতিবার রাতে বিলোনিয়া থানার ইন্সপেক্টর স্বপন সেনের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী উত্তর সোনাইছড়ি এলাকায় নিয়মিত যানবাহন তল্লাশির সময় TR03K1716 নম্বরের গরু বোঝাই একটি গাড়ি আটক করে।গাড়ির চালক কামাল হোসেন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পুলিশ গরুগুলিসহ গাড়িটি সিজ করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। তদন্তে উঠে আসে, গরুগুলি জামজুড়ি বাজার থেকে হরিপুর হয়ে বাংলাদেশে পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশ শুক্রবার দুপুরে আদালতে চালককে পেশ করে এবং আটক গরুগুলিকে জব্দ করে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, গ্রেপ্তারকৃত গাড়িচালক কামাল হোসেনকে কিছুক্ষণ পরেই বেলবন্ডে মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে পাচারচক্রের শিকড় কতটা গভীরে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে গরু পাচার!প্রকাশ্যে দিনের আলোয় বিলোনিয়া থেকে শান্তিরবাজার থানা এলাকা হয়ে অনায়াসে ছুটে যাচ্ছে গরু বোঝাই গাড়িগুলি। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও এই পাচার অব্যাহত থাকাটা প্রশাসনিক গাফিলতিরই পরিচয়।বিশেষ করে গোমতী জেলার শালগড়া, খিলপাড়া ও জামজুড়ি এলাকা থেকে নিয়মিত গরু বোঝাই গাড়ি দক্ষিণ জেলার সীমান্তে পাচারের জন্য পাঠানো হচ্ছে। তদন্তে উঠে এসেছে, শালগড়া এলাকার আব্দুল হাকিম বিভিন্ন বাজার থেকে গরু কিনে বোলেরো গাড়িতে বোঝাই করে পাচারের জন্য পাঠাচ্ছে।গো মাতার ভক্তরা কোথায়? প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নএই অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কোনও বড় পদক্ষেপ এখনও প্রশাসন নেয়নি। প্রশ্ন উঠছে, গো মাতার ভক্তরা কোথায়? বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও অন্যান্য সংগঠন কেন চুপচাপ এই পাচার দেখছে?প্রশ্ন একটাই—এই পাচারচক্র কি প্রশাসনের মদতে চলছে? নাকি কোনও বড় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই চক্র এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে প্রশাসন ইচ্ছা করেও ব্যবস্থা নিতে পারছে না?স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন, শক্ত হাতে এই পাচার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং প্রশাসন তার নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখাক। এখন দেখার বিষয়, এই পাচার রোধে প্রশাসন আদৌ কোনো কড়া পদক্ষেপ নেয় কি না, নাকি আগের মতোই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply