education-crisis – বাংলাকাল https://banglakal.com বাংলা আজ যা ভাবে, দুনিয়া ভাবে কাল। Thu, 06 Mar 2025 09:53:49 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.7.2 https://banglakal.com/wp-content/uploads/2025/03/cropped-Logo-with-BG-32x32.png education-crisis – বাংলাকাল https://banglakal.com 32 32 242431868 অপসংস্কৃতির খোলা হাওয়ায় বিপন্ন আজকের ছাত্র ও যুবসমাজ https://banglakal.com/opinion/declining-culture-threatens-students-and-youth/ https://banglakal.com/opinion/declining-culture-threatens-students-and-youth/#respond Thu, 06 Mar 2025 09:45:38 +0000 https://banglakal.com/?p=168 আমাদের সভ্যতা ও সমাজের সর্বত্র আজ অপসংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। পোশাক-পরিচ্ছদ, চালচলন, কথাবার্তা এমন কী শরীরী ভাষায় যেন একটা ‘উগ্র’ গন্ধ। যেন একটা অশুভ ইঙ্গিত। যৌন আবেদনমূলক পোশাক-পরিচ্ছদ, রুচিহীন-অশালীন চালচলন ও বেপরোয়া কথাবার্তা প্রমাণ করছে জীবনের মূল্যহীন অসারতার প্রতি চুম্বকীয় আকর্ষণ। প্রমাণ করছে সমাজের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা ও আদর্শবোধের অভাব।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে আজ অপসংস্কৃতি ও অবক্ষয়ের বায়ুবিকার প্রবাহিত হয়ে চলেছে। যে সাহিত্য-শিল্প সমাজের ও জীবনের দর্পণ বলে অভিহিত সেটাও আজ অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিণত হয়েছে। একথা অনস্বীকার্য, আজকের সাহিত্যে শুচিতাকে যেন বিদায় জানানো হয়েছে। তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’ ধ্যানধারণার প্রবক্তাদের তরফে বলা হচ্ছে, শুচিতা না কি এখন একটা মানস-সংস্কার মাত্র। হায়রে, স্রেফ নগ্নতা, অকারণ হিংসা, বেহিসেবি জীবনযাপন, খুন, রাহাজানি, নীতিহীনতা ইত্যাদিই যেন আজ বাস্তববাদী সাহিত্য বলে গ্রন্থ জগতে বরণীয় আসন লাভ করেছে।

স্বাভাবিক কারণেই সাহিত্যের এই কলুষিত ধারা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে গিয়ে আজকের ছাত্র ও যুবসমাজ হয়ে পড়েছে দিশেহারা। সাহিত্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আজকের চিত্রকলাও নগ্নতা আর রুচি-বিকৃতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সিনেমা, থিয়েটার, নাটক ও যাত্রাপালাতেও অশ্লীলতার নগ্ন প্রদর্শন মানুষের মনকে বিপথে চালিত করছে। বর্তমানে কিছু রাজনৈতিক দল ও কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও অপসংস্কৃতি প্রাধান্য পাচ্ছে, যা নতুন প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। অশ্লীল পোস্টার বা বিজ্ঞাপন পথে ঘাটে, হাটে-বাজারে সর্বত্র মানুষের দৃষ্টিকে কলুষিত করছে। টিভি, ভিডিও, ভিসিপি, ইন্টারনেট আর ‘স্মার্টফোন’ আজ অপসংস্কৃতি ও অবক্ষয়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

তাছাড়া আল্ট্রা মডার্ন জীবনচর্যার নামে নারী-পুরুষের সম্পর্কের ঘন ঘন বিচ্ছেদ ঘটছে। অবৈধ সম্পর্ক ও অন্যান্য অমানবিক কারণে বধূ হত্যার হিড়িক বাড়ছে। বাড়ছে ধর্মীয় উন্মাদনা। বাড়ছে প্ররোচনা ও উস্কানির রাজনীতি। বাড়ছে সম্প্রতি রাজনীতিবিদদের 'পেটেন্ট' নেওয়া 'ভাষা সন্ত্রাস'। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নানা দুর্নীতির মালায়, আধ্যাত্মিকতার অভাব, নৈতিক মূল্যবোধের অভাব, সর্বোপরি নীতিহীন রাজনৈতিক মতাদর্শ গোটা সমাজটাকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করছে।

আজকের যুগে বিজ্ঞাপনও একেবারে ভারতীয় সংস্কৃতির অন্দরমহলে প্রবেশ করেছে। আপনি চান বা না চান সেখানে অশ্লীল কুরুচিকর ও অর্ধনগ্ন ছবির কোলাজ নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে অপরিণত বুদ্ধির ক্রেতাদের মন ভোলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যৌন আবেদনমূলক এই ধরনের বিজ্ঞাপন অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্যিই নোংরামির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আর এতে কচি-কাঁচা, কিশোর-কিশোরীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সব চেয়ে বেশি। বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র এমন কি যাত্রাপালার কিছু কিছু অর্ধনগ্ন, অশ্লীল পোস্টার আমাদের ভুলিয়ে দিচ্ছে যে আমরা সভ্য সমাজে বাস করছি। পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছে এখন টাকাটাই সব। ব্যবসায়িক স্বার্থটাই বড় কথা।

এই অপসংস্কৃতির যুগে বিজ্ঞাপণে নারী দেহের নির্লজ্জ প্রদর্শনের মতো কুরুচিকর বিজ্ঞাপণ কচিকাঁচা ও কিশোর কিশোরীদের মাথা কিভাবে খাচ্ছে তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। এই ধরনের কুরুচিকর বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে নানান বিকৃত মূল্যবোধ আমাদের চিন্তা-চেতনায় অনায়াসেই ঢুকে পড়ছে। সত্যি কথা বলতে কী আমাদের আচার-আচরণকেও তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই এই ধরনের বিজ্ঞাপণী প্রচার রুখতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সমাজ জীবনে যে একটা মহা বিপর্যয় নেমে আসবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। অথচ তথাকথিত দেশনেতা বা সমাজকর্মীদের এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই। যুবসমাজ গোল্লায় যাক, রাজ্য বা রাষ্ট্র রসাতলে যাক, তাদের কিছু যায় আসে না। নিজেদের স্বার্থটা পূরণ হলেই হল।

আজকালকার সিনেমা, নাটক, মেগা সিরিয়াল ও যাত্রাপালায় জীবনের অসার ও অবাস্তব দিকগুলিই প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রদর্শিত হচ্ছে হিংস্রতা ও যৌনতার কু-চিত্র। সাবালকত্বের নামে বাংলা ছবির অশ্লীল ও রগরগে দৃশ্যের স্বেচ্ছা প্রয়োগ আমাদের কোন অতলে নিয়ে যাচ্ছে তা মুষ্টিমেয় দু’চারজন ছাড়া আর কেউ ভেবে দেখছে না। এখনকার গানের মধ্যেও আপত্তিকর শব্দের ছড়াছড়ি। সেই সঙ্গে আছে অশ্লীল দৃশ্য। আর আছে আইটেম ড্যান্সের ছড়াছড়ি। স্বল্পবসনাদের বিকৃত অঙ্গভঙ্গিই যে নাচ নয়, তা আমরা ভুলতে বসেছি। এখন ব্যবসায়িক সাফল্যই যেন সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কর্তব্য, আদর্শ ও সামাজিক দায়িত্বের যেন কোনও মূল্য নেই। মানুষকে বিপথে চালিত করে মুনাফা অর্জনই যদি একমাত্র পন্থা হয় তাহলে আমাদের সভ্যতা ও সমাজ যে অল্প
সময়েই পঙ্গু হয়ে যাবে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। হিংসা, মারদাঙ্গা এবং মানুষের আদিম প্রবৃত্তি কখনওই চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হতে পারে না। এই বোধশক্তি আমাদের আর কবে জন্মাবে?

আজকের দিনের এই অপসংস্কৃতির জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিভ্রান্ত হচ্ছে সবাই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বিপথে চালিত হচ্ছে আজকের যুবসমাজ। একদিকে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে হিংস্রতা ও যৌনতার সুড়সুড়ি এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে আজকের যুবসমাজ তাদের নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শবোধ, কর্তব্য নিষ্ঠা ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা সবই ভুলতে বসেছে। ত্যাগের মধ্যে যে আনন্দ, আদর্শ জীবনযাপন ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি আস্থা যে মানসিক তৃপ্তি এনে দেয়, মানুষ তা ভুলতে বসেছে। মানুষ এখন তাৎক্ষণিক প্রাপ্তির আকর্ষণে, সাময়িক ইন্দ্রিয় সুখের উত্তেজনা ও ভোগ সর্বস্বতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। যে ছাত্র ও যুব সমাজের উপর দেশ গঠনের মহান দায়িত্বভার, এখন তারাই আদর্শবোধ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়ে অপসংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। । পথে-ঘাটে গুরুজনদের ও স্কুল কলেজে শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করতে তারা ভুলে যাচ্ছে। ভুলে যাচ্ছে সুশৃঙ্খল, সংযত ও মার্জিত আচরণ। আজ সবাই যেন উদ্ধত ও বেপরোয়া। সমাজের সর্বত্র যেন একটা মাস্তানি ও গুণ্ডামির আবহ। ফলে দিশাহীন এই ছাত্র ও যুব সমাজ নানা অসামাজিক ও বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আজকের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও তাদের ‘ব্যবহার’ করছে। শেষে অপ্রাপ্তির বোঝা নিয়ে এদেরই একটা বড়ো অংশ নুন শো’তে ভীড় জমাচ্ছে। নিষিদ্ধ, অশ্লীল পত্র-পত্রিকার বিক্রি বাড়াচ্ছে। আবার কখনও ড্রাগের আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে তারা নিজেদের এবং গোটা সমাজের একটা মহা সর্বনাশ ডেকে আনছে।

পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় এখন সব কিছু যাচাই হচ্ছে অর্থের মানদণ্ডে। তাই অধিকাংশ প্রভাবশালী অসাধু মুনাফাখোর তাদের লাভের অঙ্ক বাড়ানোর জন্য অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের ঠিকা নিয়েছে। আর তারাই ছাত্র ও যুব সমাজকে বিপথগামী করে তুলেছে। তাই চারিদিকে অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নীতিহীনতা ও আদর্শহীনতা দেখে কেউ গর্জে উঠতে পারে না। আর পারবেই বা কী করে? তাদের মেরুদণ্ডটাই তো ভেঙ্গে গিয়েছে। এখন কেউ না কেউ কারও না কারও মুখাপেক্ষী। সুতরাং অন্যায়, অবিচার নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী? তাই অপসংস্কৃতি আজ সংক্রামক ব্যাধির মতো গোটা সমাজকেই পঙ্গু ও বিপথগামী করে তুলেছে।

ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনে অপসংস্কৃতি যে মারাত্মক ক্ষতিকারক এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত থাকা উচিত নয়। তবে একথা ঠিক যে, এই অক্টোপাশরূপী অপসংস্কৃতির হাত থেকে রেহাই পাওয়া খুব সহজ নয়। এ জন্য চাই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সংঘবদ্ধ প্রয়াস। অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহকদের বিরুদ্ধে চাই কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার উপযুক্ত প্রয়োগ। বিক্ষিপ্তভাবে দু’একটি অশ্লীল চলচ্চিত্র, ভিডিও ও পত্র-পত্রিকা বন্ধের দাবি মাঝে মাঝে ওঠে ঠিকই, কিন্তু সে প্রতিবাদ এতটাই ক্ষীণ যে প্রভাবশালী দুষ্টচক্র তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করে না। অনেকে আবার জেনেও না জানার ভান করে। আমার মনে হয়, একমাত্র সংঘবদ্ধ আন্দোলন বা প্রয়াসই পারে এই দুষ্টচক্রকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে। যে কোনও মূল্যে মানুষের মধ্যে আদর্শবোধ, নৈতিক মূল্যবোধ, দায়িত্ব, কর্তব্য ও শৃঙ্খলাবোধ ইত্যাদি জাগিয়ে দিয়ে সমাজকে অধঃপতনের নরককুণ্ড থেকে টেনে তুলতেই হবে। এ দায়িত্ব আমার আপনার, সকলের। আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

]]>
https://banglakal.com/opinion/declining-culture-threatens-students-and-youth/feed/ 0 168