নয়াদিল্লি: কেরালাভিত্তিক হিন্দু সংগঠন ‘শ্রী নারায়ণা মানব ধর্মম ট্রাস্ট’ সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ট্রাস্ট সমাজসংস্কারক শ্রী নারায়ণা গুরুর শিক্ষার প্রচারের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল। তাদের দাবি, সংশোধিত আইনটি ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইনি সংবাদমাধ্যম বার অ্যান্ড বেন্চ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাস্টটি ইতিমধ্যেই চলা একাধিক পিটিশনের মধ্যে হস্তক্ষেপ করার আবেদন দায়ের করেছে। ট্রাস্টের বক্তব্য, তাদের এই হস্তক্ষেপ শ্রী নারায়ণা গুরুর শিক্ষা ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে, যা সামাজিক ন্যায় ও সম্প্রদায়গুলির পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উপর জোর দেয়। শীর্ষ আদালতে ট্রাস্ট জানায়, “আমরা নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারি না, যখন এই বিতর্কিত আইন মুসলিম সম্প্রদায় এবং দেশের সামাজিক সম্প্রীতির উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে।”

পিটিশনে বলা হয়েছে, সংশোধিত আইনটি ওয়াকফ ব্যবস্থাকে ভুলভাবে ‘অ-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং ঐতিহাসিকভাবে ইসলামি আইনি ভিত্তিকে মুছে দিচ্ছে, যা ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার মূল ভিত্তি ছিল। ট্রাস্টের দাবি, এই আইন শতাব্দীপ্রাচীন ইসলামি ফিকাহকে সরিয়ে দিয়ে এক রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কাঠামো চাপিয়ে দিচ্ছে, যা মুসলিম ধর্মীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলির স্বায়ত্তশাসনকে নস্যাৎ করছে।

আবেদনপত্রে সংশোধিত আইনটিকে “অসাংবিধানিক, অনন্য রাষ্ট্র-নির্মিত এবং রাষ্ট্র-আরোপিত পরিকল্পনা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা ধর্মীয় দান-সম্পত্তির উপর অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে এবং সংবিধানের ২১, ২৫, ২৬ ও ২৯(১) অনুচ্ছেদের অধীনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। পিটিশনে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যত মুসলিম সম্প্রদায়কে তার অর্থনৈতিক ও আর্থিক ভিত্তি থেকে বঞ্চিত করবে, যা ইসলামের চর্চা ও অস্তিত্বকেই বিপন্ন করবে।

এদিকে কেন্দ্র সরকার সুপ্রিম কোর্টে ১,৩৩২ পৃষ্ঠার প্রাথমিক হলফনামা দাখিল করে সমস্ত চ্যালেঞ্জকারী পিটিশন বাতিলের দাবি করেছে। তারা পিটিশনগুলিতে উত্থাপিত উদ্বেগকে “দুষ্টু চক্রান্তমূলক মিথ্যা প্রচার” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং সংশোধনটিকে আইনসম্মত ও সংসদের ক্ষমতার মধ্যে পড়া পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

১৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে এক সপ্তাহের সময় দেয় পিটিশনের জবাব দিতে এবং সরকারের আশ্বাস নেয় যে ৫ মে পর্যন্ত ওয়াকফ সম্পত্তি বাতিল বা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে সদস্য নিয়োগ করা হবে না।

তবে ৫ মে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, যিনি মামলাটি শুনছিলেন, হঠাৎ নিজের বিরত থাকার সিদ্ধান্ত জানান, কারণ ১৩ মে তার অবসর। তিনি জানান, এই পর্যায়ে কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ বা রায় সংরক্ষণ করতে তিনি ইচ্ছুক নন। এখন মামলাটি ১৫ মে বিচারপতি বি.আর. গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শোনা হবে।

এত বিপুল সংখ্যক পিটিশন জমা পড়লেও, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি স্পষ্ট করেছে যে ৭০টিরও বেশি দায়ের করা মামলার মধ্যে থেকে শুধুমাত্র নির্বাচিত পাঁচজন পিটিশনারের পক্ষ থেকে যুক্তি শোনা হবে।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অনুমোদনের পর কেন্দ্রীয় সরকার ৫ এপ্রিল ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করে।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply