ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একাধিক মামলার শুনানি স্থগিত করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। নতুন করে ১৫ মে বিচারপতি বি.আর. গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে মামলাটি শোনা হবে। বিচারপতি গাভাই শিগগিরই ভারতের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিচ্ছেন।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ৫ মে শুনানিতে বলেন, “আমি অবসর নিচ্ছি, তাই অন্তর্বর্তী রায় সংরক্ষণ করতে চাই না। দ্রুত শুনানি দরকার, কিন্তু আমি তা দেখব না। সব পক্ষ রাজি হলে বিচারপতি গাভাইয়ের বেঞ্চে বিষয়টি তোলা হবে।” উভয় পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বল, এ.এম. সিংভি এবং কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা এতে সম্মতি জানান।
শীর্ষ আদালত জানায়, আপাতত পাঁচটি আবেদনই পরবর্তী শুনানিতে নেওয়া হবে, নতুন আবেদন গ্রহণ করা হবে না। “একই বিষয়ে শত শত আবেদন দেখা সম্ভব নয়,” বলে আদালত মন্তব্য করে।
আগের শুনানিতে কপিল সিব্বল যুক্তি দেন, বহু শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ-দরগাহের মতো ধর্মীয় স্থানগুলোর নথিপত্র না থাকলেও জনসাধারণ সেগুলোকে ওয়াকফ হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে, তাই “ওয়াকফ বাই ইউজার” ধারাটি বাদ দেওয়া সমস্যা তৈরি করবে।
কেন্দ্রের পক্ষে তুষার মেহতা বলেন, নতুন বিধান শুধু ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্য এবং পূর্বে নথিভুক্ত সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে থাকবে। তিনি জানান, সংসদে এই আশ্বাস কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু দিয়েছেন।
ওয়াকফ বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ হয়। প্রধান বিচারপতি খন্না বলেন, “হিন্দু ধর্মীয় বোর্ডে কি অ-হিন্দুদের রাখা হবে?” — বিষয়টির সংবেদনশীলতার দিকটি তুলে ধরে আদালত প্রস্তাব করে যে কেবল সরকারি পদে থাকা সদস্য ছাড়া সকল নিয়মিত সদস্য মুসলিম হওয়া উচিত।
কেন্দ্র আদালতকে আশ্বাস দেয়, নতুন করে কোনো নিয়োগ এখনই করা হবে না এবং বিদ্যমান ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। আদালত এই বক্তব্য রেকর্ডে রাখে।
এআইএমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, দিল্লির বিধায়ক আমানতুল্লাহ খান, জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড এবং ডিএমকে, আরজেডি, সিপিআই-র মতো বিরোধী দলগুলি এই আইন চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছে। বিপরীতে অসম, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের বিজেপি-শাসিত সরকারগুলি সংশোধিত আইনকে সমর্থন করেছে।
প্রধান আপত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে “ওয়াকফ বাই ইউজার” প্রভিশন বাতিল, অ-মুসলিমদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি, নারী সদস্য সীমিত করা, ওয়াকফ সৃষ্টিতে পাঁচ বছর মুসলিম অনুশীলনকারী থাকার শর্ত, প্রত্নতাত্ত্বিক বা আদিবাসী জমিতে ওয়াকফের সীমাবদ্ধতা এবং সরকারের ভূমি বিরোধ মেটানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি।