সংঘাতবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ইউরো-মেড মনিটরের বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল—গড়ে প্রতিদিন তিনজন। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, সংঘাতবিরতির পরও ইসরায়েল গণহত্যার নীতি অব্যাহত রেখেছে।

ড্রোন ও স্নাইপার হামলার শিকার সাধারণ ফিলিস্তিনিরা

ইউরো-মেড মনিটরের ফিল্ড টিম জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা স্নাইপার ও ড্রোন ব্যবহার করে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। গাজা উপত্যকার উত্তরে ও পূর্ব সীমান্তে আরোপিত “বাফার জোন” সংলগ্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পরিদর্শন করতে গেলে ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১৫ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে পাঁচজন নিৎসারিম সামরিক চেকপয়েন্টের কাছে নিহত হয়েছেন।

সোমবার (১০ মার্চ) একটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলে আব্দুল্লাহ আলি আল-শায়ের নিহত হয়েছেন এবং অপর একজন আহত হয়েছেন, যদিও তারা ঘোষিত “নিরাপদ অঞ্চলে” অবস্থান করছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই অন্য একটি ড্রোন হামলায় আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের কাছে তিন সহোদর—মাহমুদ, মোহাম্মদ ও আহমদ আবদুল্লাহ আহমেদ নিহত হন।

রাফাহ সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার

সংঘাতবিরতির পর থেকে সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছে রাফাহ গভর্নরেট।

  • ৮ মার্চ, শনিবার সকালে ইসরায়েলি বাহিনী মিশর সীমান্তবর্তী আল-সালাম এলাকায় ৫৩ বছর বয়সী আবদেল মোনিম আলি কিস্তাকে তার নিজের বাড়ির ভেতরে গুলি করে হত্যা করে।
  • একই দিনে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আল-শাওকা শহরে মাহমুদ হুসেইন ফারহান আল-হিসি (৩৭) ও মাহদি আবদুল্লাহ নাদি জারঘুন (৩৯) নিহত হন।

ইসরায়েলি সেনারা গাজার পূর্বাঞ্চলে শুজাইয়া এবং উত্তর গাজার বেইত হানুন শহরে বারবার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েল সংঘাতবিরতি লঙ্ঘন করছে

ইউরো-মেড মনিটরের হিসাব অনুযায়ী, সংঘাতবিরতির পর থেকে:

  • ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন (প্রতি দুই দিনে গড়ে ৬ জন)
  • ৬০৫ জন আহত হয়েছেন (প্রতিদিন গড়ে ১১.৮ জন)

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এসব হামলা “কোনো সামরিক প্রয়োজন ছাড়াই” পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি সংঘাতবিরতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।

ইসরায়েলের অবরোধ ও মানবিক সংকট

গত ১৫ মাস ধরে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। অবরোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

ইউরো-মেড মনিটর জানায়, ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। ফলে বাজারগুলোতে দ্রব্যসামগ্রীর মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলো কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য জীবনধারণ অসম্ভব করে তুলতে চায়, যা গণহত্যার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের আহ্বান

ইউরো-মেড মনিটর বলেছে, “মানবিক সহায়তা পাওয়ার অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। এটি কোনোভাবেই রাজনীতি বা সামরিক লেনদেনের উপকরণ হতে পারে না।”

সংস্থাটি আরও দাবি করেছে, “ইসরায়েল যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে, সেটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এড়িয়ে যেতে পারে না।”

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ও চুক্তি স্থগিতের আহ্বান

ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে চাপ বাড়াতে ইউরো-মেড মনিটর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন ইসরায়েলের বাণিজ্য সুবিধা ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করা হয়।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply