ভারত-পাকিস্তান চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের আবহে রাজস্থানের জয়পুর শহরের কয়েকটি মিষ্টির দোকান অভিনব এক ‘দেশপ্রেমমূলক’ পদক্ষেপ নিয়েছে — তারা ‘পাক’ শব্দটি মিষ্টির নাম থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। ফলে ‘মাইসোর পাক’ এখন ‘মাইসোর শ্রী’, ‘মোতি পাক’ হয়েছে ‘মোতি শ্রী’, আর ‘গোঁদ পাক’ রূপ নিয়েছে ‘গোঁদ শ্রী’-তে।

এক দোকানদার NDTV-কে বলেন, “আমরা সমস্ত মিষ্টির নাম থেকে ‘পাক’ শব্দটি বাদ দিয়ে দিয়েছি।”

এই সিদ্ধান্ত শুনে অনেকেই বিস্মিত, আবার কেউ কেউ এটিকে চরম পর্যায়ের “জিঙ্গোইস্টিক” বা উগ্র জাতীয়তাবাদী পদক্ষেপ বলেই চিহ্নিত করছেন। তবে এই নাম বদলের পেছনে যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা, সেটা হলো— “পাক” শব্দটির প্রকৃত অর্থ ও উৎস নিয়ে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

‘পাক’ মানে কি পাকিস্তান?

‘পাক’ শব্দটি পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত রূপ নয়। আসলে, ‘পাক’ (বা ‘পাকা’) শব্দটি এসেছে দক্ষিণ ভারতের কন্নড় ভাষা থেকে, যার অর্থ— মিষ্টির প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত বিশেষ এক চিনি-সিরাপ বা মিষ্টি ঘন তরল উপাদান। আর তারও উৎস খুঁজে পাওয়া যায় সংস্কৃত ‘পক্ব’ (pakvá) শব্দে, যার অর্থ— রান্না করা, পাকা বা সিদ্ধ।

ভাষাবিদ ও অধ্যাপক অভিষেক অবতন্স এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) লেখেন,

“কে তাদের বলবে যে মাইসোর পাক, মোতি পাক, আম পাক ইত্যাদিতে ‘পাক’ এসেছে ‘পাকা’ শব্দ থেকে, যা কন্নড় ভাষায় মিষ্টি চিনি-সিরাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়… এই শব্দের উৎস সংস্কৃত ‘পক্ব’।”

এই নাম বদল কার্যত অজ্ঞতা ও অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতার প্রকাশ মাত্র। ভাষা ও সংস্কৃতির মূল তাৎপর্য না জেনে শুধুমাত্র রাজনৈতিক আবেগে এই ধরনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে হাস্যকর এবং অপ্রয়োজনীয়।

মিষ্টি হোক মিষ্টির মতো— রাজনীতি নয়

ভারতীয় মিষ্টির নাম শুধুমাত্র খাদ্য নয়, তার মধ্যে নিহিত থাকে একটি অঞ্চল, একটি ভাষা ও একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। ‘মাইসোর পাক’ কেবল মিষ্টি নয়, মাইসোরের গর্বও বটে। তার নাম পরিবর্তন মানে তার ইতিহাসকে মুছে ফেলা নয় কি?

মিষ্টির রাজনীতি নয়, বরং মিষ্টির স্বাদেই থাকুক ঐক্যের বার্তা।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply