বই: ভারতীয় সিনেমায় সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি ও ইতিহাসবিকৃতি, মুহাম্মাদ আবদুল আলিম

সমালোচক : ফিরদৌস সুলতানা

ভারতীয় সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি দীর্ঘকাল ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা বহন করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই সিনেমা অনেক সময় রাজনৈতিক আদর্শ, শাসক দলের ভাবমূর্তি নির্মাণ এবং বিরোধী মতকে বিতাড়িত করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। মুহাম্মাদ আবদুল আলিমের ভারতীয় সিনেমায় সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি ও ইতিহাসবিকৃতি বইটি এই পরিবর্তনের অন্তরালের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও সাংস্কৃতিক কৌশলগুলোকে উন্মোচিত করে।

সিনেমার রাজনৈতিক ব্যবহারের রূপরেখা

লেখক আবদুল আলিম তাঁর বইয়ে দেখিয়েছেন যে, বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে কিছু নির্দিষ্ট সিনেমা পরিকল্পিতভাবে প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

এই প্রোপাগান্ডা দু’টি প্রধান স্তম্ভে গড়ে উঠেছে:

1. হিন্দুত্ববাদ ও জাতীয়তাবাদের বিস্তার

2. বিরোধী দল, বিশেষত কংগ্রেসের নেতিবাচক চিত্রায়ন বিজেপি সরকারের প্রোপাগান্ডা কৌশলসমূহ

১. ইতিহাসের পুনর্লিখন: লেখক আবদুল আলিম দেখান, কীভাবে ঐতিহাসিক ঘটনা ও চরিত্রগুলোকে বিকৃত করে হিন্দু গৌরব ও বীরত্বের রূপকথা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সিনেমার মাধ্যমে মুসলিম শাসকদের বর্বরতা এবং হিন্দু বীরদের আত্মত্যাগের একতরফা চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

২. ইসলামোফোবিয়া এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন: Kashmir Files-এর মতো সিনেমা মুসলিম সম্প্রদায়কে সন্দেহজনক, সহিংস ও ‘অন্য’ হিসেবে তুলে ধরে। এগুলো একটি বৃহৎ প্রোপাগান্ডার অংশ, যেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করে হিন্দু সংখ্যাগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য ও শত্রু-চিন্তার প্রচার করা হয়।

৩. শাসক দলের ইতিবাচক চিত্র নির্মাণ: বিজেপি সরকারের উন্নয়নকেন্দ্রিক ভাবমূর্তি গঠনের উদ্দেশ্যে তৈরি হয় সিনেমা বা ডকুমেন্টারি ঘরানার চলচ্চিত্র, যেখানে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম ও নেতৃত্বকে গৌরবময়ভাবে তুলে ধরা হয়। PM Narendra Modi সিনেমাটি এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

The Accidental Prime Minister: লেখক আবদুল আলিম এই সিনেমাটিকে একটি ‘চরিত্রহননকারী প্রোপাগান্ডা ফিল্ম’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এতে মনমোহন সিংকে দুর্বল, নির্লিপ্ত ও ক্রীড়নক হিসেবে দেখানো হয়েছে। গান্ধী পরিবারের আধিপত্যকে নেতিবাচক আলোকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি কেবল একটি জীবনীচিত্র নয়, বরং একপক্ষীয় রাজনৈতিক আক্রমণ যা কংগ্রেস দলকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। লেখক আবদুল আলিমের মতে, এই ধরনের সিনেমা শুধু ইতিহাস বিকৃতি করে না, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক চেতনার উপরও প্রভাব ফেলে। জনগণের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করতে সিনেমাকে একটি নীরব অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের পক্ষে এক অশুভ সংকেত।

লেখক আবদুল আলিম যে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বর্তমান ভারতীয় সিনেমায় বিজেপি সরকারের প্রোপাগান্ডা বিশ্লেষণ করেছেন, তা একটি সময়োপযোগী ও সাহসী প্রচেষ্টা। সিনেমা যতদিন দর্শকের আবেগ ও চিন্তাজগতে প্রভাব বিস্তার করবে, ততদিন তা রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের কাছে একটি আকর্ষণীয় হাতিয়ার হয়ে থাকবে। কিন্তু প্রোপাগান্ডার চাপে সিনেমার শিল্পমান, সত্যনিষ্ঠতা এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব যে সংকটে পড়েছে, তা সচেতন দর্শক ও গবেষকদের চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত। এই গ্রুপ এর সকল সদস্যদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেরা ব‌ইটা পড়ুন এবং আপনারা বাকিদের কে এই ব‌ই টার কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা প্রচার করুন ।

প্রকাশকঃ লেখা প্রকাশনী, মূল্যঃ 450/- টাকা, যোগাযোগ নাম্বারঃ 80016 17046

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply