পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার গিধগ্রামের দাসপাড়া এলাকার প্রায় ১৩০টি দলিত পরিবার তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয় গিধেশ্বর শিব মন্দিরে তাঁদের প্রবেশাধিকার নেই বলে তাঁরা দাবি করছেন। সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মাচরণের অধিকার থাকলেও, তথাকথিত “নিম্নবর্ণের” পরিচয়ের কারণে তাঁদের মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
দাস সম্প্রদায়ের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে মুচি ও তাঁতির পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের অভিযোগ, মন্দির কমিটি ও গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারা তাঁদের মন্দিরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। গ্রামের এক বাসিন্দা এক্করি দাস বলেন, “আমরা প্রার্থনা করতে গেলেই আমাদের গালিগালাজ করা হয়, অপমান করা হয় এবং মন্দির থেকে বের করে দেওয়া হয়।” জানা গেছে, এই বৈষম্যের শিকড় প্রায় ৩০০ বছর পুরনো, যখন এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ছয়টি দলিত পরিবার জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়। এরপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দুই বিধায়ক এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে, ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে দলিত পরিবারগুলিকে মন্দিরে প্রবেশ ও প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।
এক্করি দাস বলেন, “আমরা শিব ঠাকুরের উদ্দেশ্যে দুধ আর ফল নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু মন্দিরের দরজা আমাদের জন্য বন্ধ ছিল।” শিবরাত্রির মেলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা এড়াতে পুলিশ দলিত পরিবারগুলিকে অপেক্ষা করতে বলে।
এখানেই শেষ নয়। মন্দিরে প্রবেশাধিকারের দাবির পর অর্থনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন দলিতরা। অভিযোগ, গ্রামবাসীদের নির্দেশে স্থানীয় দুগ্ধ উৎপাদক কেন্দ্রগুলি দলিত পরিবারগুলির কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে প্রায় ৩০-৪০টি পরিবারের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মন্দির কমিটির সদস্য দিনবন্ধু মণ্ডল বলেন, “এটি বহু পুরনো রীতি। দলিতদের মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দিলে গ্রামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।”
অন্যদিকে, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী স্বীকার করেন যে এটি একটি গুরুতর সমস্যা, তবে তিনি বলেন, “এই সমস্যার সমাধান সময়সাপেক্ষ।”
কাটোয়া মহকুমা শাসক অনিশা জৈন জানান, “২৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত শীঘ্রই কার্যকর করা হবে। আমরা পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছি।”
এদিকে দলিত পরিবারগুলি তাদের দাবিতে অনড়। এক্করি দাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে কলকাতা বা দিল্লির দরজায় কড়া নাড়ব। নইলে আমাদের পূর্বপুরুষদের ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে।”