ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অল ইন্ডিয়া ক্যাথলিক ইউনিয়ন (AICU)। বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে বলে সংগঠনটি অভিযোগ করেছে।
১০৬ বছর পুরনো এই সংগঠনটি অরুণাচল প্রদেশ ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন অ্যাক্ট, ১৯৭৮ পুনরায় কার্যকর করার প্রচেষ্টার কড়া সমালোচনা করেছে। প্রায় ৪৭ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এই আইন এখন আবার চালু করার চেষ্টা চলছে, যা তথাকথিত “বলপূর্বক” ধর্মান্তরণ রোধের অজুহাতে আনা হচ্ছে।
AICU-এর মুখপাত্র বলেন, “এই আইন পুনরায় কার্যকর হলে বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হবে এবং খ্রিস্টানদের আরও প্রান্তিক করে দেবে।”
সংগঠনটি মধ্যপ্রদেশের প্রস্তাবিত ধর্মান্তরণ-বিরোধী আইনে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব সম্প্রতি মেয়েদের ধর্মান্তরিত করা হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
AICU-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই আইন শুধু কঠোর নয়, এটি ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এটি একটি বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মহিলাদের আরও বিচ্ছিন্ন করে দেবে।”
AICU মণিপুরের চলমান সংকট নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যেখানে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর ৬০,০০০-এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে বড় অংশই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মণিপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। হাজার হাজার পরিবার এখনো দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে, যথাযথ আশ্রয় বা সাহায্য ছাড়া। সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
AICU-এর তথ্য অনুযায়ী, এই বছর ভারতে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ৮৩৪টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের খ্রিস্টান সম্প্রদায়।
সংগঠনটির এক প্রতিনিধি বলেন, “আমরা বর্বর জনতা দ্বারা সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা দেখছি। পুলিশ হয় নিষ্ক্রিয় থাকে, নয়তো হামলাকারীদের মদত দেয়।”
এছাড়া অনেক ভুক্তভোগী প্রতিশোধের ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতেও সাহস পান না।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যে দেশে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয় না, সেখানে মানুষ বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়। এই পরিস্থিতি অবশ্যই বদলাতে হবে।”
যদিও সংগঠনটি স্বীকার করেছে যে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই ঘৃণার রাজনীতি সমর্থন করে না।
AICU-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই বিদ্বেষমূলক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী। ভারতবাসীর বড় অংশ শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে চায়।”
শেষে, AICU কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে ধর্মীয় সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হয়।
“আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই যে, তারা যেন প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করে, ধর্ম নির্বিশেষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে,” বিবৃতিটি শেষ হয়েছে এই কথায়।