লখনউ: উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ে বিশাল পুলিশবাহিনীর উপস্থিতিতে শমিনা শাহ বাবা মাজারের পাশে অবস্থিত একটি মাদ্রাসা, ১০টি দোকান ও ৩৬টি ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায় ও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক আক্রমণের অভিযোগ তুলেছেন। বুলডোজার অভিযান চলেছে পরপর দুই দিন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ — কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি — দাবি করেছে, মাদ্রাসাটি তাদের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু মাদ্রাসা ও দোকানগুলির মালিকরা বলছেন, তারা বহু বছর ধরে এখানে আছেন এবং এই ধ্বংস কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও মুসলিমদের হেয় করার চেষ্টা। সরকারি আধিকারিকদের দাবি, ছয় মাস আগে থেকেই নোটিশ পাঠানো হয়েছিল এবং অবৈধ কাঠামো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে স্থানীয়দের দাবি, এই অভিযান আসলে মুসলিমদের প্রান্তিক করার একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ। মাদ্রাসার শিক্ষকরা গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের চোখের সামনে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেল। আমরা বাকরুদ্ধ।” শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। ধ্বংসের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যখন ক্ষুব্ধ দোকানদাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক ও চিকিৎসকের উপর হামলা চালান। এতে দু’জন অধ্যাপক আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই নোটিশ দিয়ে আসছি। আমাদের জমিতে অবৈধ দখল বরদাস্ত করা হবে না।” এই ঘটনার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকার আরও অন্তত ১২টি মাদ্রাসাকে “অবৈধ” ঘোষণা করেছে এবং বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এসব প্রতিষ্ঠান শুধু শিক্ষাদানই নয়, বহু মানুষকে জীবিকা দিয়েছে। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে এমন দমন নীতিকে তাঁরা “বৈষম্যমূলক” আখ্যা দিয়ে আইনি পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। এদিকে, ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বুলডোজার বন্ধ করার দাবি তুলেছেন দোকানদার, বাসিন্দা এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অধিকারকর্মীরাও সরকারের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ এবং ‘সংবিধান-বিরোধী’ পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
Facebook Comments Box