উত্তরপ্রদেশের রামনগরের কিশোর সংশোধনাগারে আটক মুসলিম নাবালকরা ভয়াবহ নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশোধনাগারে তাদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক গালাগালি দেওয়া হয়েছে এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এই নাবালকদের বিরুদ্ধে বারাণসীর কোটওয়া গ্রামে পাথর ছোড়ার অভিযোগ ছিল। মুক্তির পর, নাগরিক অধিকার রক্ষা সংস্থা Association for Protection of Civil Rights (APCR)-এর একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার তথ্য নথিভুক্ত করে। নাবালকদের পরিবার জানিয়েছে, পুলিশ মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার পর, মুসলিম কিশোরদের আলাদাভাবে জোরপূর্বক মেঝে পরিষ্কার করানো হয় ও নোংরা কাজ করানো হয়।তাদেরকে ‘মোল্লা’, ‘কাটমোল্লা’, ‘পাকিস্তানি’ ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ দেওয়া হয়। কিছু নাবালক অভিযোগ করেছে, থানায় থাকার সময় টয়লেট ব্যবহার করতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।APCR-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সংশোধনাগারের কর্মকর্তারা সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতের কারণে মুসলিম শিশুদের উপর অন্যায় আচরণ করেছেন। শুধুমাত্র মুসলিম নাবালকদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করানো হয়েছে, তাদের মারধর করা হয়েছে এবং টয়লেট ব্যবহার করতে চাওয়ায় লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে।”নাবালকদের পক্ষের আইনজীবী শামিম নোমানি এই গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই অভিযোগের ভিত্তিতে নাবালকদের আটক রাখার কোনো আইনগত বৈধতা নেই। এটি স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।” বারাণসীর কোটওয়া গ্রামে ৪ মার্চ রাতে কয়েকজন মুসলিম নাবালকের বিরুদ্ধে স্ট্রিটলাইট ভাঙচুর ও CCTV ক্যামেরার ক্ষতির অভিযোগ ওঠে। পরে এই ঘটনার CCTV ফুটেজ ভাইরাল হলে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় কিছু হিন্দু পরিবার অভিযোগ করে, মুসলিম কিশোররা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বাড়ির আশেপাশে পাথর ছুঁড়ে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছিল। তবে, পুলিশ দ্রুত এই অভিযোগ নাকচ করে জানিয়ে দেয় যে, নাবালকরা শুধুমাত্র স্ট্রিটলাইটের বাল্ব চুরির উদ্দেশ্যে এগুলো করেছিল, কোনো সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য ছিল না। CCTV ফুটেজ বিশ্লেষণের পর, লোঠা থানার পুলিশ ১২-১৫ বছর বয়সী ৯ জন নাবালককে গ্রেপ্তার করে। তাদের কোর্টে পেশ করা হলে রামনগরের সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বলেছে, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে, সংশোধনাগারে নির্যাতনের অভিযোগ উঠায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি উঠেছে।
Facebook Comments Box