মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব ঘোষণা করেছেন যে, যারা মেয়েদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করবে, তাদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করা হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ভোপালে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তার সরকার ধর্মান্তরিতকরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “মেয়েদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। এখন মধ্যপ্রদেশে যারা মেয়েদের ধর্মান্তর করবে, তাদেরও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।”

এই প্রস্তাবের জন্য ২০২১ সালের মধ্যপ্রদেশ ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন অ্যাক্ট সংশোধন করা হবে। বর্তমানে এই আইনের আওতায় জালিয়াতি, বলপ্রয়োগ বা প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তরের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ₹৫০,০০০ জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে সংশোধনী পাশ হলে মধ্যপ্রদেশ হবে প্রথম রাজ্য, যেখানে এই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।

এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন “লাভ জিহাদ” নামক বিতর্কিত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলো দাবি করছে যে, মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের প্রেম ও বিবাহের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করছে। এই ধারণাটি বহুবার মিথ্যা প্রমাণিত হলেও, এটি ভারতজুড়ে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

ঘোষণার পর মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর একটি বিবৃতি জারি করে জানায়, “রাজ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন বলবৎ রয়েছে, যা বলপ্রয়োগ বা প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের মাধ্যমে ধর্মান্তর করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। এখন থেকে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে এবং কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “সরকার ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর। নাবালিকাদের ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমাদের সরকার নারীদের মর্যাদাহানি এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাই যারা ধর্মান্তর ঘটাবে, তারা মৃত্যুদণ্ড পাবে।”

এই সংশোধনী বিল আগামী ১০ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে উত্থাপন করা হতে পারে।

তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিরোধী কংগ্রেস দল কড়া সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস নেতা আরিফ মাসুদ বলেন, “প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যাখ্যা করতে হবে, ‘জোরপূর্বক ধর্মান্তর’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন? ভোপালে এখনো অনেক নিখোঁজ মেয়ে রয়েছে। সম্প্রতি ইটখেড়ি এলাকা থেকে একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে, যার পরিবার তিন দিন ধরে উদ্বিগ্ন। মুখ্যমন্ত্রী কঠোর পদক্ষেপের কথা বলছেন, অথচ এখনো মেয়েটির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।”

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি জিতু পাতওয়ারি অভিযোগ করেন, রাজ্যে নারীদের ওপর অপরাধ দমনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তিনি দাবি করেন, “গত পাঁচ-ছয় বছরে মধ্যপ্রদেশ থেকে চার লাখ নারী নিখোঁজ হয়েছে। প্রতিদিন রাজ্যে ১০০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন, যার মধ্যে মাত্র ২০ জন অভিযোগ দায়ের করেন। বাকি ৮০ জন ভয়ে মুখ খোলেন না।”

এই প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে, যেখানে বিরোধীরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংখ্যালঘুদের টার্গেট করার হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply