ভারতের সংবিধানে প্রথম ১৯৫৪ সালে ওয়াকফ আইন প্রণীত হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে এর সংশোধনী আনা হয়। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে মোট ওয়াকফ সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ৯.৪ লক্ষ একর জমি ও ৮.৭ লক্ষ বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তি। বিরোধী দল ও মুসলিম সংগঠনগুলোর দাবি, বিজেপি সরকার এই সম্পত্তিগুলো দখল করার জন্যই নতুন ওয়াকফ সংশোধনী বিল আনতে চাইছে।
বিজেপির প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল: বিতর্কিত নিয়মাবলী
১) আগে যেকোনো সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব ছিল, কিন্তু নতুন সংশোধনীর ফলে এই ক্ষমতা এখন জেলার প্রশাসক বা ডেপুটি কমিশনারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
২) সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে ডিজিটাল নথিভুক্ত করতে হবে, যা অনেকের মতে ভবিষ্যতে সম্পত্তি অধিগ্রহণের একটি কৌশল হতে পারে।
৩) ওয়াকফ সংক্রান্ত মামলার জন্য ট্রাইব্যুনালের সদস্য সংখ্যা তিনজন থেকে কমিয়ে দুইজন করা হয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়াকে দুর্বল করতে পারে। তবে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়, ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে।
৪) ওয়াকফ বোর্ড ও সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিলে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিরোধীদের আপত্তি ও আন্দোলনের ভবিষ্যৎ
বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মুসলিম সংগঠনগুলো মনে করছে, এই সংশোধনী কার্যকর হলে মুসলমানদের ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে। তারা অভিযোগ করছে, বিজেপি সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে মুসলমানদের ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করতে চাইছে।
এদিনের বিক্ষোভে বক্তারা বলেন, “ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ভিত্তি, যা কেন্দ্রের রাজনৈতিক খেলার অংশ হতে পারে না। আমরা এর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।”
এই বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ নেয় এবং বিরোধীরা কীভাবে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে, তা এখন সময়ের অপেক্ষা।