দিল্লির সাকেত কোর্ট ২০১৯ সালের জামিয়া নগর আন্দোলনের ঘটনায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (JNU) গবেষক এবং অ্যান্টি-সিএএ আন্দোলনের কর্মী শারজিল ইমামসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে। এই মামলায় মোট ১৫ জন অভিযুক্ত ছিলেন, তবে আদালত ৪ জনকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে।

২০১৯ সালের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেন। তবে দিল্লি পুলিশ মিছিলের পথ আটকে দেয় এবং শিক্ষার্থীদের উপর কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষের জেরে অনেক জায়গায় সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে যখন দিল্লি পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে, যেখানে শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে বলপ্রয়োগ করা হয়।

শারজিল ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, শারজিল ইমাম তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলিমদের উসকে দিয়েছিলেন এবং চাক্কা জ্যামের (রাস্তা অবরোধ) আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষ ও সম্পত্তি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। যদিও ইমামের আইনজীবীরা দাবি করেছেন যে তিনি কোনও সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না, আদালত বলেছে, তাঁর বক্তব্য হিংসা উসকে দিয়েছে এবং এটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

শারজিল ইমামের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • IPC ১০৯ – উসকানি
  • IPC ১২০বি – অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র
  • IPC ১৫৩এ – ধর্মের ভিত্তিতে বিদ্বেষ ছড়ানো
  • IPC ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯ – দাঙ্গা ও অবৈধ সমাবেশ
  • IPC ১৮৬, ৩৫৩ – সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দেওয়া ও আক্রমণ
  • পাবলিক প্রপার্টি ড্যামেজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট – সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস

আদালতের পর্যবেক্ষণ

বিচারক বিশাল সিং বলেন, শারজিল ইমাম অত্যন্ত কৌশলীভাবে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন, যেখানে সরাসরি কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি। তবে, “যদি তাঁর আহ্বান শুধুমাত্র মুসলিমদের উদ্দেশ্যেই হয়, তাহলে এটা স্বাভাবিকভাবেই অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে ধরা যেতে পারে।”

আদালত আরও বলে, “চাক্কা জ্যাম কোনোভাবেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হতে পারে না। এটি জনসাধারণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং সহিংসতা ডেকে আনে। এমনকি যদি কোনও সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগ না-ও ঘটে, তবুও এটি এক অংশের বিরুদ্ধে অন্য অংশের জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টি।”

আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া

শারজিল ইমামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিরুদ্ধে তাঁর আইনি দল লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসিফ ইকবাল তানহা, যিনি এই মামলায় অভিযুক্ত, বলেছেন যে তিনি এই আদেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন।

একজন আইনজীবী বলেন, “চার্জ গঠনের পর্যায়ে আদালতকে কেবলমাত্র প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়, কিন্তু এই বিচারক নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা আদৌ প্রাসঙ্গিক ছিল না। আমরা এই আদেশকে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করব।”

যারা নির্দোষ ঘোষিত হয়েছেন

মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে মোহাম্মদ আদিল, রুহুল আমিন, মোহাম্মদ জামাল, মোহাম্মদ ওমর ও মোহাম্মদ সাহিলের বিরুদ্ধে প্রমাণের অভাবে মামলা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

এখন কী হবে?

এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের আরও বিশদ বিশ্লেষণ হবে। একইসঙ্গে, আসামিপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারে।

দিল্লির এই আদালতের রায় সিএএ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আন্দোলনের আইনগত বৈধতা এবং বিক্ষোভের চরিত্র নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, উচ্চ আদালতে এই রায়ের ভবিষ্যৎ কী হয়।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply