হোলির সময় মুসলিম বিদ্বেষ বৃদ্ধির মধ্যেও উত্তর প্রদেশের বৃন্দাবনের ঐতিহ্যবাহী বাঁকে বিহারী মন্দিরের পুরোহিতরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা মন্দিরের জন্য মুসলিম শিল্পীদের তৈরি করা পোশাক কেনা বন্ধ করবেন না। তাঁদের মতে, ধর্মীয় বৈষম্যের কোনো স্থান নেই মন্দিরের ঐতিহ্যে।
শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মুক্তি সংগ্রাম ন্যাস-এর নেতা দীনেশ শর্মা ফালাহারি দাবি করেন যে, মন্দিরের পোশাক শুধুমাত্র “ধর্মীয় বিশুদ্ধতা” মেনে তৈরি হওয়া উচিত। তার মতে, মুসলিম কারিগরদের তৈরি পোশাক ভগবান কৃষ্ণের জন্য উপযুক্ত নয়।
এই দাবিকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন মন্দিরের জ্যেষ্ঠ পুরোহিত গ্যানেন্দ্র কিশোর গোস্বামী। তিনি বলেন, মন্দির পরিচালনা পরিষদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, এই অদ্ভুত দাবিকে মান্যতা দেওয়া হবে না।
তিনি জানান, প্রায় ৮০ শতাংশ কারিগর, যারা মন্দিরের জন্য পোশাক, মুকুট এবং সূক্ষ্ম জরদৌজি কাজ করেন, তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের।
গোস্বামী আরও বলেন, “আমাদের মন্দির ১৬৪ বছর ধরে এই ঐতিহ্য বহন করে আসছে। আমরা হঠাৎ করে এটি পরিবর্তন করতে পারি না। মন্দিরের পোশাক তৈরিতে মুসলিম কারিগরদের দক্ষতা অনন্য।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “মন্দিরে প্রতিদিন ৩০,০০০-৪০,০০০ ভক্ত আসেন, আর রবিবার ও উৎসবে এই সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। আমাদের দেবমূর্তির পোশাক নিয়মিত বদলাতে হয়, বিশেষত উৎসবের সময়ে। মুসলিম দর্জিরা বরাবরই সময়মতো পোশাক সরবরাহ করেছেন। আমরা শুধুমাত্র কিছু লোকের আপত্তির কারণে এই ঐতিহ্য বদলাতে পারি না।”
গোস্বামী আরও বলেন, শুধু পোশাক নয়, বহু মুসলিম শিল্পী মন্দিরের সংগীত ও অন্যান্য সেবার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন।
“আজও মুসলিম সম্প্রদায়ের শিল্পীরা মন্দিরের বিশেষ অনুষ্ঠানে ‘নাফিরি’ বাজান। এমনকি অনেক বিখ্যাত ভজন গায়কও মুসলিম সম্প্রদায়ের, যাঁরা ভগবান কৃষ্ণের সেবায় নিবেদিত।”
অন্য এক পুরোহিত অনন্ত বিহারী গোস্বামী বলেন, “মন্দিরের পোশাক তৈরির ৯৯ শতাংশ কাজ শুরু থেকেই মুসলিম কারিগররা করে আসছেন। এই ঐতিহ্য আমরা পরিবর্তন করব না।”
তবে শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি সংগ্রাম ন্যাস সংগঠন উত্তর প্রদেশের বারাণসী, অযোধ্যা, সম্ভলসহ বিভিন্ন মন্দিরে মুসলিম কারিগরদের তৈরি পোশাক সরবরাহ বন্ধের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি মুসলিম কারিগরদের অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা।
বাঁকে বিহারী মন্দিরের পুরোহিতরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তাঁরা ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন। তাঁদের মতে, “যারা এই ধরনের দাবি করছেন, তারা মুসলিম শিল্পীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান। কিন্তু আমরা প্রতিটি ধর্ম ও ব্যক্তিকে সম্মান করি।”