সাহারানপুর, উত্তরপ্রদেশ | ২৯ মে ২০২৫: সাহারানপুর জেলার নাকুর ব্লকের ভোজপুর গ্রামে একটি নির্মাণাধীন মসজিদ ২৯ মে সকালে জেলা পঞ্চায়েত প্রশাসনের নির্দেশে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কোনোরকম লিখিত নোটিস বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রশাসন হঠাৎ করেই তিনটি বুলডোজার ও বিপুল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে মসজিদটি ভেঙে দেয়। কংগ্রেস সাংসদ ইমরান মাসুদও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে বলেন, “ধর্মীয় নির্মাণ ভাঙার আগে কোনোরকম নোটিস দেওয়া হয়নি। ধর্মীয় ট্রাস্ট আইন ১৮৬৩ অনুযায়ী, ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে অনুমতির প্রয়োজন নেই।”

জমি দান, নামাজের স্থান, ও নির্মাণ প্রক্রিয়া

গ্রামের প্রাক্তন প্রধান ওয়াজিদ আলি জানান, ২০২৩ সালে গ্রামের দুই ভাই স্থানীয় মুসলিমদের জন্য মসজিদের জমি দান করেন। তখন থেকেই টিনের ছাউনি দিয়ে অস্থায়ীভাবে নামাজ পড়া শুরু হয়। এক বছর আগে মসজিদের নির্মাণ শুরু হয়, এবং সম্প্রতি পর্যন্ত গ্রাউন্ড ফ্লোর নির্মাণাধীন অবস্থায় ছিল।

ওয়াজিদ আলি বলেন, “প্রথমে থানার এসএইচও নির্মাণ বন্ধ করে দেন, বলেছিলেন ম্যাপ অনুমোদিত নয়। এরপর আমরা জেলা পঞ্চায়েত চেয়ারম্যানের কাছে যাই, তিনিও দায়িত্ব অস্বীকার করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (ডিএম) কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।” ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএম অফিসে আবেদন জমা দিলেও কোনো লিখিত উত্তর মেলেনি। বরং মৌখিকভাবে অ্যাপার মুখ্য আধিকারিক (AMA) বলেন, “এটা ছোট ধর্মীয় স্থাপনা, আপনারা নির্মাণ চালিয়ে যেতে পারেন।”

২৯ মে সকাল ১১টার দিকে এসডিএম সদর সুবোধ কুমার, এএসপি মনোজ যাদব, জেলা পঞ্চায়েতের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আদেশ কুমার ও অন্যান্য কর্মকর্তারা তিনটি বুলডোজারসহ পুলিশ ও RRF বাহিনী নিয়ে এসে মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেন। স্থানীয়রা দাবি করেন, মসজিদ ভাঙার আগে কাউকে কোনোরূপ আইনি নোটিস দেওয়া হয়নি।

৭ মে এসডিএম সদর ১১ জন গ্রামবাসীকে একটি নোটিস পাঠান, যেখানে বলা হয়, তারা মসজিদ নির্মাণ করে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে এবং BNSS-এর ধারা ১২৬/১৩৫/১৭০-তে জরিমানা করা হতে পারে।

মিডিয়ায় দেওয়া বিবৃতিতে এসডিএম সুবোধ কুমার বলেন, “মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি, তাই এটি অবৈধ। আমরা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ শোনেনি, তাই আজ (২৯ মে) গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” তবে “নির্দেশ কবে দেওয়া হয়েছিল” — এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর তিনি দেননি।

জেলা পঞ্চায়েত বোর্ডের সদস্য মজিদ আলি জানান, “গ্রামের মুসলিমরা এখানে নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এখন আমাদের ধর্মীয় অধিকারকে পদদলিত করা হলো।” অনেকেই বলছেন, এটি শুধুমাত্র আইনি প্রশ্ন নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের আত্মপরিচয় ও ধর্মীয় অধিকার রক্ষার বিষয়।

এই ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি ধর্মীয় স্থাপনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে চলমান বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। স্থানীয়রা এখন আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply