বিহারের ছপরা জেলার আহিতোলি এলাকায় (নগর থানা অন্তর্গত) ‘পশু চুরির’ সন্দেহে দুই মুসলিম ভাইয়ের উপর হামলা চালায় এক হিংস্র জনতা। এই হামলায় জাকির কুরেশি নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, এবং তার ভাই নিহাল কুরেশি গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে পাটনার পিএমসিএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুরি হওয়া পশুটি কাছাকাছি কসাই টোলি নামক এলাকায় পাওয়া যায়। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত জনতা জাকির ও নিহালকে ধরে বেধড়ক মারধর করে। জাকির পরে হাসপাতালে মারা যান।
“জাকিরের হাত বেঁধে প্রায় ৫০-৬০ জন লোহার রড দিয়ে পেটায়। তার দুটো পা এবং পিঠ ভেঙে দেয়। তারা বলেছিল, সে ‘মিয়া’ (মুসলিম), তাই তাকে মারা হয়েছে,” জানান জাকিরের এক বন্ধু।
ঘটনাটি ঘটেছে ১১ মে সন্ধ্যা ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে।

জাকিরের বন্ধু বলেন, “জাকির খুব সাধারণ ছেলে ছিল, জিম করা ভালোবাসত। সে কখনো চুরির সাথে যুক্ত ছিল না। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
জাকিরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই খনুয়া এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে। ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়, যাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ জানায়, আহত নিহাল কুরেশির বয়ানের ভিত্তিতে ১২ মে ২০২৫ তারিখে নগর থানায় কেস নম্বর ২৫০/২৫ নথিভুক্ত হয়েছে। এই মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন ধারাগুলি অনুযায়ী ১২৬(২), ১১৫(২), ১২৫(বি), ১০৯, ১০৩(১), ৩৫২, ৩৫১(২), ৩(৫) ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
তদন্তের ভিত্তিতে একটি বিশেষ পুলিশ দল অভিযানে নেমে দুই মূল অভিযুক্ত — পঙ্কজ কুমার ও মিন্টু রাই — কে গ্রেফতার করেছে। তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রশাসন শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সকল নাগরিককে অনুরোধ করছি শান্ত থাকুন এবং কোনো গুজবে বিশ্বাস করবেন না। আমরা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

খনুয়া খালের আশেপাশে কসাই ও কুঞ্জর সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করেন। এই এলাকায় এর আগেও পশু চুরির অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা খতিয়ে দেখছে আসলে পশু চুরির ঘটনা কীভাবে ঘটল এবং এর পিছনে কারা ছিল।
জাকিরের পরিবার ও স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় যথাযথ তদন্ত ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। ১২ মে কড়া পুলিশি নজরদারির মধ্যেই জাকিরের দাফন সম্পন্ন হয়।