উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলার হারদুয়াগঞ্জ এলাকায় শনিবার সকালে চার মুসলিম যুবককে মাংস পরিবহনের অভিযোগে হিন্দুত্ববাদী জনতার হাতে নির্মমভাবে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, জনতার একাংশ পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁদের গাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
🎥 ঘটনার ভিডিও ভাইরাল:
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, চার মুসলিম যুবককে আংশিক বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে।
📋 FIR ও অভিযোগ:
হারদুয়াগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া FIR অনুযায়ী, অভিযোগকারী সলিম খান, পিতা রশিদ খান, তাঁর ভাতিজা আকিল ইব্রাহিমসহ আতরাউলি থেকে আলিগড় মান্ডি ফ্যাক্টরির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে পনেঠী রোড থেকে সাধু আশ্রম রোডের মধ্যে তাঁদের গাড়ি আটকায় ২০-৩০ জনের একটি দল।
- অভিযুক্তরা প্রথমে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
- সলিম খান ও আকিল এর প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপর লাঠি, রড ও দণ্ডি দিয়ে হামলা করা হয়।
- অভিযুক্তদের মধ্যে রামকুমার আর্য ও অর্জুন ওরফে ভুলু-সহ ১৩ জনের নাম FIR-এ উল্লেখ আছে, সঙ্গে ২০-২৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি।
- হামলাকারীরা মোবাইল ফোন ও টাকা লুট করে নেয়।
- আহতদের চিকিৎসা চলাকালীন কিছুটা সময় পরে মামলা রুজু হয়।
👮 পুলিশের ভূমিকা:
পুলিশ জানায়, মাংস ছিল মহিষের এবং গাড়ির কাগজপত্র ছিল বৈধ।
SP (রুরাল) অমৃত জৈন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারজনকে উদ্ধার করি এবং হাসপাতালে ভর্তি করাই। মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং মামলা রুজু হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে।”
🗯️ বজরং দল ও পক্ষপাতমূলক দাবি:
স্থানীয় বজরং দল নেতারা দাবি করেন, এ গাড়িটিকে আগেও “অবৈধ মাংস” বহনের সময় আটকানো হয়েছিল। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িতে থাকা মাংস ছিল মহিষের এবং বৈধ নথি সহ ছিল।
🛑 প্রাসঙ্গিক আইন ও ধারাসমূহ:
মামলাটি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর একাধিক ধারায় রুজু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ১৯১(২), ১৯১(৩): সশস্ত্র দাঙ্গা
- ১৯০, ১০৯: বেআইনি জমায়েত ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র
- ৩০৮(৫): গুরুতর আঘাত দেওয়ার চেষ্টা
- ৩১০(২): অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ
- ৩(৫): সমবায় অপরাধে দায়িত্ব
📣 প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ:
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, “পুলিশের উপস্থিতিতেই জনতা সহিংসতা চালাতে পারছে—এটাই আজকের বাস্তবতা।” তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং রাজনৈতিক প্রশ্রয়েই এমন হামলার সাহস পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
এই ধরনের হামলা শুধু আইন-শৃঙ্খলার ব্যর্থতা নয়, বরং ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে ভেদাভেদের এক নগ্ন প্রকাশ—যা গণতান্ত্রিক ভারতের সংবিধানকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।