ওড়িশা: ওড়িশা সাব-অর্ডিনেট স্টাফ সিলেকশন কমিশন (OSSSC)-এর অধীনে বন রক্ষক, বন প্রহরী এবং পশুসম্পদ পরিদর্শক পদে নিয়োগের শারীরিক দক্ষতা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনজন প্রার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই শারীরিক পরীক্ষার সময় চরম গরমে (৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে) প্রার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং পরীক্ষা আয়োজনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

স্বপ্নভঙ্গ: প্রাণ হারালেন প্রবীণ কুমার পান্ডা

রাউরকেলার ৩০ বছর বয়সী প্রবীণ কুমার পান্ডা ছিলেন একজন বি-টেক গ্র্যাজুয়েট। সরকারি চাকরির স্বপ্নে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার উচ্চ বেতনের চাকরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। শারীরিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত ৮,১৫৯ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনি একজন ছিলেন।

কিন্তু মাত্র ৪ কিলোমিটার দৌড়ানোর পরেই প্রবীণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁকে দ্রুত সুন্দরগড় মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রবীণের বাবা খাদল পান্ডা, যিনি ছেলের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন, বলেন, “ও তো সব মেডিকেল পরীক্ষা পাস করেছিল। কীভাবে এটা ঘটল বুঝতে পারছি না। ওরা বলল, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই সব শেষ হয়ে গেল।”

বুধবার প্রবীণের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, পুরো এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে।

আরও দুই প্রার্থীর করুণ পরিণতি

প্রবীণের পাশাপাশি ২৭ বছর বয়সী বৈমকেশ নায়ক (কেওনঝড়) এবং ২৬ বছর বয়সী জ্ঞানারঞ্জন জেনা (জগতসিংহপুর)-ও এই পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা, সময়সূচিতে পরিবর্তন

তীব্র গরমের মধ্যে পরীক্ষার আয়োজন করায় OSSSC-এর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দিনের তীব্র গরমে ২৫ কিলোমিটার দৌড় বাধ্যতামূলক করাটা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও অমানবিক। সমালোচনার মুখে পরবর্তী শারীরিক পরীক্ষা সকাল ৪:৩০ টায় স্থানান্তর করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের নির্দেশ

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি নিহতদের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এদিকে, বনমন্ত্রী গণেশরাম সিং খুন্তিয়া ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি কারো গাফিলতি প্রমাণিত হয়, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কিন্তু শোকগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে এই আর্থিক সাহায্য কোনো সান্ত্বনা নয়। প্রবীণের বাবা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমার ছেলে ছিল সুস্থ-সবল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাহলে এমন কী ঘটল যে সে প্রাণ হারাল?”

OSSSC-এর অবস্থান ও সমালোচনা

OSSSC চেয়ারম্যান ললিত দাস পরীক্ষার সময় নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেন, “আরও দেরি করলে অনেক প্রার্থী বয়সসীমা পেরিয়ে যেতেন, তাই পরীক্ষার তারিখ পেছানো সম্ভব ছিল না।” তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।

এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়

এ ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ওড়িশার জন্য প্রথম নয়। ২০২৩ সালে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ নিয়োগের শারীরিক পরীক্ষায় চারজন প্রার্থী মারা যান। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষায় ৫ কিলোমিটার দৌড়ের সময় দুইজন প্রাণ হারান।

এই ঘটনা ফের একবার তুলে ধরছে সরকারি চাকরির জন্য আবেদনকারী যুবকদের উপর অসহনীয় শারীরিক ও মানসিক চাপের বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার সময়সূচি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা যায়।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply