কলকাতা/গুরুগ্রাম | ৩০ মে ২০২৫: পুণের আইন কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী শার্মিষ্ঠা পাণোলিকে আজ গুরুগ্রামের নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ১৪ মে তাঁর এক্স (X) অ্যাকাউন্ট (@Sharmishta__19) থেকে ইসলাম ধর্মের প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর ও উসকানিমূলক মন্তব্য পোস্ট করেন, যা মুসলিম সমাজে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।
পোস্টটি পরে মুছে ফেলা হলেও, তা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ১৫ মে পাণোলি একটি নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এই মন্তব্য ছিল একান্তই ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রতিফলন, কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে নয়।” তবে ক্ষমা চাওয়ার পরেও মহারাষ্ট্র পুলিশ ২০ মে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তিত রূপ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর ধারা ১৯৬ (বিদ্বেষ ছড়ানো), ২৯৯ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত অপমান) ও ৩৫৩ (সার্বজনীন বিশৃঙ্খলা) অনুযায়ী একটি এফআইআর দায়ের করে।
শার্মিষ্ঠার গ্রেফতার ঘিরে আইনি প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সূত্রের দাবি, কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার সময় কোনো আগাম নোটিস বা গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখায়নি। পরে দিল্লির এক ম্যাজিস্ট্রেট ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন।
ঘটনার নিন্দা করে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক ওয়ারিস পাঠান বলেন, “এই ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ধর্মীয় সহনশীলতা ও সামাজিক সম্প্রীতির পরিপন্থী। অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল।”
অন্যদিকে, শার্মিষ্ঠার গ্রেফতার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে ধর্মীয় ভাবাবেগ রক্ষায় প্রশাসনের পদক্ষেপকে সমর্থন জানালেও, অন্যপক্ষ একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে দাবি করেছে। তাঁরা বলেন, জাতীয়তাবাদী মনোভাব বা মতপ্রকাশ—even if controversial—গ্রেফতারের কারণ হতে পারে না।
‘টিম রাইজিং ফ্যালকন’ নামের একটি সোশ্যাল মিডিয়া গোষ্ঠী এই গ্রেফতারের দাবিকে সামনে থেকে উত্থাপন করার দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের “সফলতা” হিসেবে প্রচার চালিয়েছে।
এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হয়েছে ভারতে ধর্মীয় অনুভূতি, মুক্ত মতপ্রকাশ এবং আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ কতটা জটিল ও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।