তেলেঙ্গানার বিধানসভা সোমবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করেছে, যা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির (Backward Classes – BC) জন্য ৪২% সংরক্ষণের অনুমোদন দেয়। এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা শিক্ষা, সরকারি চাকরি এবং স্থানীয় প্রশাসনিক নির্বাচনে কার্যকর হবে।
পূর্বে স্থানীয় প্রশাসনে (পঞ্চায়েত ও পৌরসভা) BC শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ ১৮% থেকে ২৩% পর্যন্ত ছিল, যা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপর নির্ভর করত।
‘তেলেঙ্গানা পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, তফসিলি জাতি ও উপজাতি (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংরক্ষণ ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগ সংরক্ষণ) বিল, ২০২৫’
‘তেলেঙ্গানা পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (গ্রামীণ ও শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলিতে আসন সংরক্ষণ) বিল, ২০২৫’
এই বিল দুটির পক্ষে শুধুমাত্র শাসক কংগ্রেস দলই নয়, বিরোধী দল বিজেপি (BJP) ও ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS)-ও সমর্থন জানিয়েছে।
BC কল্যাণ মন্ত্রী পোন্নাম প্রভাকর বলেন—
“তেলেঙ্গানা বিধানসভা থেকে এক কণ্ঠে বলা উচিত যে আমরা সবাই এই বিল এবং ৪২% সংরক্ষণকে সমর্থন করি। পিছিয়ে পড়া শ্রেণি আজ দেশের মেরুদণ্ড।”
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ. রেভন্ত রেড্ডি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন—
“দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, আমরা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতি ন্যায়বিচার করছি। আমরা তাদের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন—
“তেলেঙ্গানা আজ ভারতের সামাজিক বিপ্লবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির যে স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই ছিল, সেটি আজ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।”
২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় এলে BC শ্রেণির সংরক্ষণ ৪২%-এ উন্নীত করবে। আজকের এই বিল পাস সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন।
তেলেঙ্গানা সরকারের সাম্প্রতিক জাতিগত ও সামাজিক জরিপ অনুযায়ী—
- Backward Classes (BC): ৫৬.৩৩% (১.৯৯ কোটি)
- Scheduled Castes (SC): ১৭.৪৩% (৬১.৮৪ লক্ষ)
- Scheduled Tribes (ST): ১০.৪৫% (৩৭.০৫ লক্ষ)
- Other Castes (OC): ১৫.৭৯% (৪৪.২১ লক্ষ)
- BC মুসলিম: ৩৫.৭৬ লক্ষ
BRS নেতা হরিশ রাও বলেন—
“আমরা নিঃশর্তভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য ৪২% সংরক্ষণ বিলকে সমর্থন করছি।”
BRS-এর আরেক BC নেতা গঙ্গুলা কমলাকর বলেন—
“আজ আমরা, BC সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে, এই বিলকে স্বাগত জানাই এবং সম্পূর্ণ সমর্থন জানাই!”
এই উদ্যোগের ফলে তেলেঙ্গানা বিহার ও কর্ণাটকের পরে তৃতীয় রাজ্য, যারা সম্পূর্ণ জাতিগত ও সামাজিক জরিপ চালিয়ে সংরক্ষণের হার নির্ধারণ করেছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যে “জনসংখ্যার অনুপাতে অধিকার” তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন, এটি সেই নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এই ৪২% সংরক্ষণ বিল পাসের মাধ্যমে তেলেঙ্গানা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল। এটি শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি নয়, বরং সারা ভারতে সংরক্ষণ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশক হতে পারে।