ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম যা মানবজাতির কল্যাণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে। আসলে ইসলাম একটি জীবনধারা। একটি মানুষের জীবনে কি করণীয় আর কি করণীয় নয়, তার সুস্পষ্ট নির্দেশ ইসলামে বিদ্যমান। কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ মুসলমানদেরকে নৈতিকতা, সহনশীলতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব এবং সদাচরণে উদ্বুদ্ধ করেছেন। শুধু ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের নয়, বরং বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত স্পষ্ট। তাহল আল্লাহর আদেশাবলী মেনে চলতে হবে, এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধার মনোভাব রাখতে হবে।

১. ধর্মীয় বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ

কুরআনে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বা উগ্রতা প্রদর্শন করা উচিত নয়। “তোমরা নিজেদের ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না” (সুরা নিসা: ১৭১) এই আয়াতটি আমাদের ধর্মীয় চেতনা এবং আচরণে সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। এই আয়াত দ্বারা বোঝানো হয়েছে, ইসলাম একটি মধ্যপন্থী ধর্ম, যা অতিরিক্ত রক্ষণশীলতা বা অতিরিক্ত উদারতা থেকে দূরে থাকতে বলে। ইসলাম উগ্রতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে, কারণ এমন আচরণ ইসলামের মূল দর্শন থেকে বিচ্যুত।

২. অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধা

ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এবং দেবতাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন, “অন্যের দেবতাকে গালি দিও না” (সুরা আনআম: ১০৮)। এই আয়াত দ্বারা ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সহনশীলতার মর্মার্থ প্রতীয়মান হয়। ইসলাম যে কোনো ধরনের ধর্মীয় বিদ্বেষ বা অপমানকে নিন্দা করে। এটি একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করে যে, কে কোন ধর্মে বিশ্বাস করবে, আর কে করবে না। কেননা হেদায়েত করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। এ কারণে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

৩. ধর্মের ব্যাপারে জোর-জবরদস্তি নেই

ইসলাম মানুষকে স্বাধীনভাবে ধর্ম নির্বাচন করার অধিকার প্রদান করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে, “ধর্মের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। আলোর পথ এখন সুস্পষ্ট” (সুরা বাকারা: ২৫৬)। এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলাম স্বেচ্ছায় ধর্মগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং এটি নিশ্চিত করেছে যে, কেউই জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণ করবে না। ইসলামের এ দৃষ্টিভঙ্গি অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা ও গ্রহণযোগ্যতার উদাহরণ। ইতিহাস তাই বলে। যদিও অনেকেই বিকৃত ইতিহাসের উপর আস্থা রেখে সত্য উদঘাটন করে না।

৪. নিরীহ মানুষের হত্যা নিষিদ্ধ

ইসলাম অত্যন্ত জোরালোভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ বলেন, “একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার সমান অপরাধ” (সুরা মায়েদা : ৩২)। এটি মানবজীবনের মর্যাদা ও পবিত্রতা নিশ্চিত করার একটি প্রধান নীতিমালা। ইসলামে মানুষের জীবন রক্ষা করাকে খুবই মহান কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতিটি মানুষের জীবন মূল্যবান। তাই ইসলাম বলে একটি নির্দোষ ব্যাক্তিকে হত্যা করা মানে বিশ্ব মানব মান্ডলিকে হত্যা করার সমান।

৫. সহায়তা এবং সহযোগিতা

ইসলাম নৈতিক মূল্যবোধে উৎসাহ দেয়। কুরআনে বলা হয়েছে, “যে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ বা সাহায্য করবে সে উপকৃত হবে। আর যে মন্দ কাজে প্ররোচিত বা সহযোগিতা করবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে” (সুরা নিসা: ৮৫)। এই নির্দেশ ইসলামের সামাজিক দায়িত্ববোধের গুরুত্বপূর্ণ দিকটি প্রকাশ করে, যেখানে মুসলমানরা ভালো কাজে একে অপরকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ইসলামে ধর্মীয় আচারাদি পালন ছাড়াও ফিতরা, যাকাত, সদকা, ইত্যাদি নানাবিধ অর্থ প্রদানের কথা সেই নির্দেশকে কার্যকরী করার জন্য একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়।

ইসলামের শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা

ইসলাম সবসময়ই শান্তি, সৌহার্দ্য, এবং ন্যায়ের ধর্ম। এটি ধর্মীয় সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, এবং মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। অন্যান্য ধর্মের প্রতি ইসলাম যে সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে তা মানবজাতির প্রতি আল্লাহর করুণার প্রতিফলন। ইসলামে উগ্রতা বা অতিরিক্ত কট্টরপন্থার কোনো স্থান নেই; বরং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হলো সবাইকে নিয়ে সহাবস্থান করা এবং নৈতিকতার পথে পরিচালিত হওয়া। কেননা ইসলামে সবাইকে নিজের নিজের কর্মফল ভোগ করতে হবে। তাই নিজস্ব কর্মের প্রতি সজাগ থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সমাজ সেবায় অনুপ্রেরণা প্রদান করা হয়েছে। আসলে ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা পশ্চমী দুনিয়া করেনি বা ইচ্ছা করে বিকৃত ভাবে প্রকাশ করেছে। তার উজ্জ্বল উদাহরন জিহাদ শব্দের অপব্যাখ্যা। তিনটি স্তরকে একাকার করে দিয়ে আত্মশুদ্ধির পর্যায়কে পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
তাই বলা যায় যে, ইসলাম মানুষের জীবনের মূল্য, স্বাধীনতা, এবং ধর্মীয় সহনশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হলো ন্যায়, শান্তি, ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত এক সমাজ গঠন করা, যেখানে ধর্মীয় ও সামাজিক ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসাথে বসবাস করতে পারে।

Facebook Comments Box
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply