নতুন ইনকাম ট্যাক্স বিল, ২০২৫-এর কয়েকটি ধারা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (IFF)। সংস্থাটি লোকসভার সিলেক্ট কমিটির চেয়ারপার্সন বৈজয়ন্ত পান্ডার কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই বিলের নির্দিষ্ট ধারাগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, ধারা ২৪৭, ২৪৯, এবং ২৬১ অনুসারে ডিজিটাল অনুসন্ধান ও বাজেয়াপ্তকরণের ক্ষমতা করদাতাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দিতে পারে।
প্রস্তাবিত বিধানের বিরুদ্ধে IFF-এর আপত্তি
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ধারাগুলো “কর্তৃপক্ষকে ভার্চুয়াল ডিজিটাল স্পেস অনুসন্ধান, প্রবেশ ও বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেয়, যা অতিরিক্ত নজরদারি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং আইনি অপব্যবহারের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।”
IFF কমিটিকে অনুরোধ করেছে এই বিধানগুলোর পর্যালোচনা করতে এবং যথাযথ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা সংযোজন করতে, যাতে আইনের স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগ রোধ করা যায়।
সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যের দাবি
IFF-এর মতে, এই বিধানগুলো অবশ্যই সংবিধানিক নীতিগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম হস্তক্ষেপের নীতি অনুসরণ করতে হবে। চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় (Justice K.S. Puttaswamy v. Union of India, 2017) এর প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে যে, “এই ধারাগুলোতে অবশ্যই অনুপাতিকতার নীতি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে ন্যূনতম হস্তক্ষেপ নিশ্চিত হয় এবং ‘বিশ্বাস করার কারণ’ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেন নির্বিচারে পদক্ষেপ নেওয়া না যায়।”
বিচারবিভাগীয় নজরদারির প্রয়োজনীয়তা
IFF জোর দিয়ে বলেছে, এই বিধানগুলোর কার্যকারিতা বিচারিক নজরদারির আওতায় আনা উচিত। বর্তমানে, অভ্যন্তরীণ দফতরের অনুমোদনই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো স্বতন্ত্র বিচারিক ওয়ারেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হলে জবাবদিহিতা বাড়বে।
চিঠিতে Bhartiya Nagrik Suraksha Sanhita (BNSS), ২০২৩-এর ধারা ২৪৯(১০)-এর প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, BNSS-এর ৯৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালত বা পুলিশ কর্মকর্তারা লিখিত আদেশের মাধ্যমে ডিজিটাল তথ্য আহ্বান করতে পারেন, যা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।
তবে ধারা ২৪৯ অনুসারে তদন্তের কারণ প্রকাশের নিষেধাজ্ঞা করদাতাদের আইনি চ্যালেঞ্জ জানানো থেকে বিরত রাখতে পারে, যা সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের পরিপন্থী।
ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণের নিরাপত্তা
IFF আরও দাবি করেছে যে, বিলটিতে ডিজিটাল প্রমাণের সুরক্ষিত সংরক্ষণের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই।
বিশেষ করে, ‘হ্যাশ ভ্যালু ভেরিফিকেশন’ এর মতো প্রযুক্তিগত দিকগুলো বাদ পড়েছে, যা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই প্রমাণ বিকৃতি ও অপব্যবহার রোধে স্পষ্ট প্রযুক্তিগত ও আইনি নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন।
সংসদীয় কমিটির প্রতি আহ্বান
IFF স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, যদি এই সুরক্ষা ব্যবস্থা সংযুক্ত না করা হয়, তবে এই বিল নজরদারি ব্যবস্থার অপব্যবহার ও গোপনীয়তার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করবে।
চিঠির শেষাংশে বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি সিলেক্ট কমিটি সংবিধানিক মূল্যবোধ ও স্বচ্ছতার নীতি রক্ষা করবে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সুপারিশ পেশ করতে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত।”