কর্ণাটকের আবাসন, ওয়াকফ ও সংখ্যালঘু কল্যাণমন্ত্রী বি. জেড. জামির আহমেদ খান জানিয়েছেন, রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ড তার নথিভুক্ত সম্পত্তির ব্যাপক দখলদারি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এ পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মোট ৪,১০৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, কর্ণাটকের মসজিদ, দরগাহ, কবরস্থান, আশুরখানা, ঈদগাহ এবং অন্যান্য ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষামূলক ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো দখলদারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই দখলদারি রোধে রাজ্য সরকার গত পাঁচ বছরে ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
বিগত অর্থবছরে ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়া অনুদান ছিল:
- ২০১৯-২০: ১২৫ কোটি টাকা
- ২০২০-২১: ৮৭ কোটি টাকা
- ২০২১-২২: ৯৬ কোটি টাকা
- ২০২২-২৩: ৯৩ কোটি টাকা
- ২০২৩-২৪: ১২৭ কোটি টাকা
তবে, দখলদারদের হাত থেকে মাত্র ৩৭১ একর জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, যা মোট মামলার তুলনায় অত্যন্ত কম।
কর্ণাটকের ওয়াকফ জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ওয়াকফ বোর্ড কৃষকদের জমিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে দাবি করে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠায়, যা ব্যাপক বিক্ষোভ ও আইনি লড়াইয়ের জন্ম দেয়।
২০২৪ সালের অক্টোবরে, বিজয়পুর জেলার হোনাওয়াদ গ্রামে প্রায় ১,৫০০ একর কৃষিজমি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে কৃষকদের উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হয়। তবে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সরকার জানায়, আসলে সেখানে মাত্র ১১ একর জমি ওয়াকফ বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত।
ওয়াকফ সম্পত্তি দখলদারি নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা মামলার সংখ্যা:
- কালাবুরাগি: ৫৬২টি মামলা
- বেঙ্গালুরু আরবান: ৪১৮টি মামলা
- বিজয়পুর: ৩৮৮টি মামলা
- বিদর: ৩০৯টি মামলা
- বেল্লারি: ২৭৪টি মামলা
এর মধ্যে কালাবুরাগি জেলায় ৩৯৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট মামলার তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে, তুমাকুরু জেলায় নিষ্পত্তির হার সবচেয়ে বেশি (৮৫%)—২৮৪টি মামলার মধ্যে ২৪২টির সমাধান হয়েছে।
- মোট ১,৯৩৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট মামলার ৪৭%।
- ২,১৭৩টি মামলা এখনো ওয়াকফ বোর্ডের সিইও বা তদন্ত কর্মকর্তার অধীনে বিচারাধীন।
- ৭৬টি মামলা বিভিন্ন আদালতে আটকে রয়েছে।
- ১১২টি মামলা কর্ণাটক ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
এছাড়া, ১,৪৮৫টি মামলা ওয়াকফ কর্মকর্তা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠালেও বাস্তবে মাত্র ১৭৯টি জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
একটি ২০১২ সালের কর্ণাটক সংখ্যালঘু কমিশনের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কর্ণাটকে ২৭,০০০ একর ওয়াকফ জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে বা দখলদারদের হাতে চলে গেছে। এই অনিয়মে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ওয়াকফ বোর্ডের কিছু সদস্য ও রিয়েল এস্টেট মাফিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ওয়াকফ বোর্ডের জমি দখলদারি নিয়ে কর্ণাটকে ক্রমবর্ধমান বিতর্ক, আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে। যদিও সরকার ও ওয়াকফ বোর্ড এই সমস্যার সমাধানে সক্রিয়, তবুও মামলা নিষ্পত্তি ও পুনরুদ্ধারের গতি অত্যন্ত ধীর। ভবিষ্যতে এই সমস্যার কী সমাধান হয়, তা নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সাধারণ জনগণেরও গভীর দৃষ্টি থাকবে।